গাজীপুর সিটি নির্বাচন কাল শেষ মুর্র্হুূতের প্রচারণা ও প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর সংবাদ সম্মেলন
মো. মিলটন খন্দকার, গাজীপুর: আগামিকাল মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর গতকাল রোববার রাতেই শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। তাই শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগে পুরো দিন মহাব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা। একইদিন প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার বিভিন্ন অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছেন। ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্স, অমোচনীয়কালী এবং সিলসহ অন্যান্য নির্বাচনী সরজ্জাম গাজীপুরে বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। আজ সোমবার দুপুর থেকে সংশ্লিষ্ট ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্রে প্রেরণ করা হবে। এবং নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মাঠে নামবে।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সকাল ৯টা থেকে সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়নের সালনা এলাকায় তার গণসংযোগ শুরু করেন। এরপর তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি পথসভায় অংশ গ্রহণ করেন। দুপুরে নিজ বাসভন নগরীর ছয়দানা এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন। বিকেলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা চালান। এরপর জয়দেবপুর, গাছা ও টঙ্গী এলাকায় মহাসড়কে গণসংযোগ করবেন তিনি।
অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার সকাল ১১টার দিকে টঙ্গী বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে বিএনপি প্রার্থী কথা বলবেন বলে জানা গেছে। পরে এই প্রার্থী টঙ্গী এলাকা থেকে তার গণসংযোগ শুরু করবেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের অভিযোগের পর রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত। বিএনপির প্রার্থী প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে চলেছে। তিনি আমাকে, নৌকাকে আওয়ামী লীগকে ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। হাসান উদ্দিন সরকার মুরব্বি মানুষ। তিনি আমার পার্টিকে, আমাকে সন্ত্রাসী বলছেন। আমাদের মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। তার মতো একজন মুরব্বি মানুষের এমন কথা বলা উচিত না। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপির এজেন্ট নাই, সেটা তো আমার দেখার বিষয় না। তাদের এজেন্ট তাদের কাছে কেন আসে না, সে বিষয়েও আমার করার কিছু নাই। এটা তাদের ব্যাপার
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি কোনোভাবেই স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছি না। আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা করছি। আমি জনমানুষকে একটি ক্লিন ও গ্রিন সিটি উপহার দিতে চাই। আমরা এই যানজটের মধ্যে থাকতে চাই না। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করে একটি বাসযোগ্য শহর গড়তে চাই।
২৪ জুন থেকে গাজীপুরের ভোটার ব্যতীত বহিরাগতরা কোনও প্রচার-প্রচারণা করতে পারবে না নির্বাচন কমিশনের এমন প্রজ্ঞাপন জারির পরও খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক রোববার সকালে প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। এটি কি আচরণবিধি লঙ্ঘন কিনা সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এখনও কোনও চিঠি পাইনি। যদি চিঠি পাই, তবে সেটি পালন করবো। তাছাড়া ২৪ জুন রাত ১২টার পর থেকে নির্বাচনি প্রচারণা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে রোববার সকালে টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিএনপি মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার ২৬ জুন নির্বাচনে ভোটার ও তার দলের এজেন্টদের নিরাপত্তা দাবি করেছেন। তিনি শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনী প্রতিদিন তার এজেন্ট ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। তিনি ভোটের দিন তার দলের এজেন্ট ও ভোটারদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, শত উসকানি ও অত্যাচারেও নির্বাচন থেকে পিছপা হবো না। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এক দিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পুলিশের গাড়িতে করে ঘুরছে অন্য দিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেকের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনে কারচুপি করতে খুলনা থেকে পুলিশকে গাজীপুরে পাঠানো হয়েছে খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করার জন্য। তিনি বলেন, সামান্যতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো। এটা আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জীবনের শেষ নির্বাচনটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই।
বহিরাগতদের গাজীপুর ছাড়ার নির্দেশ: বহিরাগতদের গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যারা এই সিটির বাসিন্দা বা ভোটার নন, তাদের শনিবার রাত ১২টার আগে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সিটি নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ডল এ তথ্য জানান।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৭ জন মেয়র, ২৫৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপি মনোনীত হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক নিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।