উলিপুরে নদী ভাঙনে দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন
রোকনুজ্জামান মানু, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুরে তিস্তা নদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়িসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে ঘরবাড়ি সরাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভাঙনকবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ভাঙনে গৃহহারা মানুষজন খাদ্য ও আবাসিক সংকটে পড়েছেন।
জানা গেছে, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা হিন্দু পাড়া, মাঝিপাড়া, মেম্বার পাড়া, ডাক্তার পাড়া, ফকির পাড়া গ্রামের ৫১টি পরিবার গুনাইগাছ ইউনিয়নের সন্তোষ অভিরাম, টিটমা, কাজির চক, শুকদেব কুন্ডর ২০টি পরিবার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর, চর বজরার ৪৬টি পরিবার হাতিয়া ইউনিয়নের কামারটারি ও হাতিয়া গ্রামের ৮১ পরিবারসহ দুই শতাধিক বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অবিরাম ভাঙ্গনের মুখে ঘরবাড়ী সরাতে হিমশিম খাচ্ছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন। ভাঙ্গনে গৃহহারা মানুষজন খাদ্য ও আবাসিক সংকটে পড়েছেন। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে গুনাইগাছ ইউনিয়নে কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত নাগড়াকুড়া টি বাঁধসহ ৫টি গ্রাম ও ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি মন্দির।
থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা গ্রামের মহুবর রহমান (৫৫), আঞ্জুআরা বেগম (৫০), বিশোদা (৬০), নরেশ চন্দ্র বর্মন (৫৮), মোসলেম উদ্দিন (৪৫), গোপাল চন্দ্র বর্মন (৫০), লালমিয়া (৫৫), বিরেন্দ্র নাথ (৬০), আব্দুল মামুদ (৮৫) ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আরও অনেকে জানান, গত বছর থেকে এ সব এলাকায় ভাঙন শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় চলতি বছর ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। ওই ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য তারামনি বম্মণী বলেন, পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দারচরে অপরিকল্পিতভাবে তিস্তা নদীর পশ্চিম পাড়ে মাটি ভরাট করে বৃহৎ সোলার প্যানেল প্রকল্প স্থাপনের কারণে নদীর গতি পরিবর্তন হওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। তিনি আরও জানান, গত কয়েকদিনের ভাঙনে তার বাড়িসহ হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, ওই এলাকায় প্রতি বছর নদী ভাঙছে ভাঙনরোধে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেদন করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা নিলে নদী ভাঙনরোধ সম্ভব হবে।
গুনাইগাছ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খোকা জানান, শুকনো মৌসুমে নাগড়াকুড়া এলাকায় টি বাঁধের নিকটবর্তী এলাকা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টি বাঁধটি হুমকির সম্মুখিন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ইউনিয়ন প্রতি ১ টন করে চাল সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙন রোধের ব্যবস্থার জন্য জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকায় টি বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছেন।