চীন থেকে দেশের পথে কর্ণফুলী টানেলের বোরিং মেশিন
সাইদ রিপন: সব জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এ প্রকল্পটি নিয়ে চীন সরকার বিভিন্ন সময় জটিলতার সৃষ্টি করেছিলো। সব জটিলতা মিটিয়ে ইতিমধ্যেই চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্পটির জন্য প্রায় সাড়ে ১২শ কোটি টাকা ঋণের অর্থছাড় করেছে। খুব দ্রুতই আরো প্রায় ৭শ থেকে ৯শ কোটি টাকার ঋণ ছাড়ের সম্ভবনাও রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি প্রায় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা হয়েছে। তাছাড়া চীনের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) প্রকল্পটির টানেল বোরিং মেশিনের (টিবিএম) নির্মাণ কাজ করেছে নিজ দেশেই। বর্তমানে চীন থেকে বোরিং মেশিনটি নিয়ে বাংলাদেশের পথে আসছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিসিসিসি। তাছাড়া চীনের অর্থছাড় দেরিতে হওয়ায় বর্তমানে প্রকল্পটির সময় ২০২২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে টানেলর নির্মাণের মূল খনন কাজ শুরু করার সম্ভাবনা বেশি। বর্তমানে জোড়েসোড়েই চলছে টানেলের বহির্মুখী অবকাঠামো তৈরির কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংলগ্ন এলাকায় অবকঠামো উন্নয়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও যানবাহন সংগ্রহ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থানসহ উন্নয়ন কাজের অনেকাংশ এগিয়ে গেছে। চীনের সাংহাই মেগাসিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে কর্ণফুলীর উভয়তীরে পরিকল্পিত উন্নয়ন, নগরায়ন, সমুদ্রবন্দর সুবিধার সম্প্রসারণ, দক্ষিণ চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আধুনিক পর্যটনের বিকাশ এবং বৈপ্লবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পরবর্তী পর্যায়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মিয়ানমার হয়ে চীনের কুনমিং প্রদেশ পর্যন্ত সরাসরি মহাসড়কে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সরকার।
সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, চীনের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই মেগাপ্রকল্পটির কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত চায়না এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে চীনের প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড়করণ হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটি। প্রকল্পটির বোরিং মেশিন দেশে এসে পৌঁছালে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের খনন কাজ শুরু হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষে অথবা অক্টোবরের শুরুতে টানেলের নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান হতে পারে।
প্রসঙ্গত, এ প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উদ্বোধন করেন। এর অন্যতম হচ্ছে ৩ হাজার ৪শ মিটার (প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার) দীর্ঘ কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। সমীক্ষা শেষে ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ শীর্ষক’ মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। টানেলের সংযোগ বা বিস্তার ও প্রবেশমুখ শুরু হবে নগরীর প্রান্তে পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমি এবং দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা বহির্গমন পথ সিইউএফএল জেটি ঘাট বরাবর। টানেলটির অবস্থান হবে কর্ণফুলীর তলদেশে ১২ থেকে ৩৬ মিটার পর্যন্ত গভীরে। চার লেনের এ টানেল হবে দুই টিউব বিশিষ্ট। টানেল নির্মিত হবে ‘শিল্ড ড্রাইভেন’ পদ্ধতিতে। প্রকল্পটি নির্মাণে মোট ব্যয় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে চীন দেবে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।