দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় ১ হাজার ২৬৫ কোটি ডলার’
উম্মুল ওয়ারা সুইটি ও পাবনা থেকে মিজান তানজিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এই কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। বাংলাদেশের প্রথম এই পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে রুশ সহায়তায়। দুই ইউনিট মিলিয়ে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার (১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা)। গতকাল দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন শেষে সংক্ষিপ্ত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুরের ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে। পরের বছর চালু হবে সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট। রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় এক হাজার ৬২ একর জমির ওপর চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রথম পর্যায়ের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।
জানা গেছে, পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ব্যবহৃত তেজষ্ক্রিয় জ্বালানি সরিয়ে নিতেও রাশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ আসবে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। শনিবার পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে কনক্রিট ঢালাই কাজ উদ্বোধন করে তিনি এই আশ্বাসবাণী দেন। বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে হাত দেওয়ার পর থেকে ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে এধরনের প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।
কোনো কাজ করতে গেলে অনেক কথা হয়’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে উদ্বেগের কিছু নেই। এখন পারমাণবিক বিদ্যুতে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে এখানে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে- সেটা আমরা মনে করি না। বিশেষ করে নিরাপত্তার দিকটা আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছি। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রক্ষণাবেক্ষণ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করেন তিনি।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আন্তর্জাতিক মান অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। রাশিয়ার সর্বশেষ জেনারেশন থ্রি-প্লাস প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি হচ্ছে এ কেন্দ্র। পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে এ রি-অ্যাক্টরে। জনগণের জন্য যাতে ঝুঁকির সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে গ্রহণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ এবং সুরক্ষিত প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় তখন লোডশেডিং হতো। আমরা বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ হিসেবে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করি। তার ফলে আজ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। কোনো লোডশেডিং নেই। ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ভারত ও রাশান ফেডারেশনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুধু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য আমরা নিজস্ব জনবল তৈরি করছি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাশান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভানোভিচ বোরিসভ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আইএইএ’র পরিচালক মি. দোহী হান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প’র প্রথম চুল্লির প্রথম কংক্রিট ঢালাই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে কনক্রিট ঢালাইয়ের কাজ উদ্বোধনের পর সেখানে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। রূপপুরের অনুষ্ঠান শেষ করে সড়কপথে পাবনা যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সার্কিট হাউজে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে পুলিশ লাইনের জনসভায় যোগ দেন তিনি।