‘ভল্টে রাখা সোনায় হেরফের হয়নি, লেখা আর মাপের ভুল’
শিমুল জাবালি: কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা সোনায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর যেভাবে ভল্টে সোনা রেখেছিল, তা সেভাবেই রয়েছে বলে জানানো হয়। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হোসেন এবং ভল্টের দায়িত্বে থাকা কারেন্সি অফিসার আওলাদ হোসেন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, ভল্টে রক্ষিত সোনায় কোনো ধরনের হেরফের হয়নি। জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে নথিভুক্ত করার সময় স্বর্ণকারের লেখার ভুলে।’ আওলাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি বলতে যা আছে, নথিভুক্ত করার সময় ইংরেজি-বাংলার ভুল। এর বাইরে অন্য ত্রুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নেই।’ দৈনিক প্রথম আলো ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ভুতুড়ে কা-’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটির জায়গায় এখন আছে মিশ্র বা সংকর ধাতু। ২২ ক্যারেট সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট। বিডি নিউজ
অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে আওলাদ বলেন, ‘২২ ক্যারেটের জায়গায় ১৮ ক্যারেট হওয়ার বিষয়টি দুটি ভিন্ন যন্ত্রে পরিমাপের কারণে হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দারা যখন সোনা জমা রাখেন, তখন হয়ত তাদের মেশিনে ২২ ক্যারেট দেখিয়েছিল, কিন্তু আমাদের মেশিনে সেটি ১৮ ক্যারেটই হয়েছিল।’ চিঠি দিয়ে বিষয়টি শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, আণবিক শক্তি কমিশনের মেশিন দিয়ে ওই সোনা মাপা হোক। তখন তারা রাজি না হয়ে বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং এনবিআর যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল, তখন সার্বিক বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট করা হয়েছে। সর্বশেষ ১১ জুলাই এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।’
শুল্ক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি সোনার চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেন। কিন্তু দুই বছর পর শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আংটি পরীক্ষা করে তাতে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) সোনা পায়। আংটিতে পায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ সোনা (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভল্টে থাকা সোনার চাকতি এবং আংটি পরীক্ষার পর দেখা গেল এগুলো সোনার নয়, অন্য ধাতুর মিশ্রনে তৈরি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।