তুলার ওপর থেকে বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের
বিশ্বজিৎ দত্ত: যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ব্যবসায়ীরা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের কটন স্পিনার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রেমন্ড ফাউস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা বিশ্বের এক নাম্বার তুলা। বিশ্বে তুলা রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম সারিতে রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানি হয় না বললেই চলে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের তুলা চাষে কীটনাশক ব্যবহার হয় কিনা এমন একটি আইন রয়েছে বাংলাদেশে (ফার্মিগেশান রুল)। এ আইনের কারণে বিশ্বের অন্যতম তুলা আমদানিকারক দেশ হয়েও বাংলাদেশ বিশ্বের এক নাম্বার তুলা আমদানি করতে পারছে না। তিনি বলেন, বাণিজ্যে যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা পণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে ফিনিস পণ্য সময়মতো বাজারেও আসতে পারে না। দিনশেষে শিল্পেরই ক্ষতি হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বেশিরভাগ তুলাই আমদানি হয় ভারত থেকে। গত বছর ভারত থেকে ৭ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ তুলাই আমদানি হয়েছে ভারত থেকে। কিছু তুলা পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও উজবেকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল এখন বাংলাদেশ থেকেই সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে কাপর অন্যতম। নিট গার্মেন্টের ৭০ শতাংশ সুতাই বাংলাদেশের স্পিনিং কারখানাগুলো তৈরি করে। অভ্যন্তরীণ টেক্সটাইলের সুতাও বেশিরভাগ দেশেই তৈরি হয়। কিছু ফিনিসড সুতা ভারত ও চায়না থেকে আমদানি হয়। তার পরিমাণ মোট কাপড়ের ৩০ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক তুলা কাউন্সিলের সদস্য সাব্বির আহমেদ চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের তুলা শিল্পকে রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বাংলাদেশের আমলেও ওই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ তুলা উৎপাদনকারী দেশ না।
আন্তর্জাতিক কটন কাউন্সিলের পরিচালক, উইলিয়াম আরো বেটেন ডরফ বলেন, বাংলাদেশ ভারত থেকে তুলা আমদানি করলেও ভালো সুতার জন্য ভারতও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে। তিনি অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দূরত্বের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তাতে আমদানি কস্ট বেশি পড়বে বলে মনে হলেও আসলে তা বেশি হবে না। কারণ ভারত থেকে তুলা আমদানি হয় সড়ক পথে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি হবে জলপথে। সেখানে খরচ কমে যাবে। দ্বিতীয়ত যুক্তরাষ্ট্রের তুলা মেশিনে প্রসেস করা ও আদ্রতা রোধক। কিন্তু ভারতীয় তুলা এরকম নয়। ফলে ভারতীয় তুলা আমদানিতে অপচয় বেশি হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলা বাংলাদেশে প্রবেশে ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট নিতে হয়। কিন্তু ভিয়েতনাম ও চীনে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা রফতানিতে তার প্রয়োজন পরে না।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলেছে। যার প্রেক্ষিতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্কায়ন করেছে। যারমধ্যে রয়েছে তুলা ও সয়াবিন। চীন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তুলার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমতাবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিশ্বের অন্যান্য প্রধান তুলা আমদানিকারক দেশগুলোতে তাদের বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।