শেরপুরে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন শেরপুরের ৭ বীরাঙ্গনা
তপু সরকার, শেরপুর: স্বাধীনতার ৪৭ বছর। দীর্ঘ এত বছরে তারা রাষ্ট্রের কাছ থেকে যোগ্য সম্মান পাননি। কেউ তাদের খোঁজও রাখেনি। ক্ষোভ দুঃখ ও স্বজন হারানোর দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচেছিলেন তারা। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় এবার শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লীর (বিধবাপল্লী) আরও ৬ জন এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া প্রামের একজন বীরাঙ্গনা নারীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লীর মোছা. মহিরন বেওয়া, মোছা. আকিরন নেছা, মোছা. জতিরন বেওয়া, মোছা. হোসনে আরা, মোছা. হাজেরা বেগম (পিতা মৃত উমেদ আলী) ও হাজেরা বেগম (পিতা মৃত হাসেন আলী) এবং রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের মৃত ফিরোজা খাতুন। এখন থেকে তারা মাসিক ১০ হাজার টাকা করে ভাতাসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
এদিকে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পর সম্ভ্রম আর স্বজন হারানোর কষ্ট বয়ে নিয়ে জীবনের শেষ প্রান্তে চলে আসা ওই বীরাঙ্গনারা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি লাভ করায় তাদের চোখে-মুখে এখন বিরাজ করছে আনন্দ-হাসির ঢেউ। এতে বেজায় খুশি তাদের স্বজনরাও।
জানা যায়, সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৫৪তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে দেশের আরও ৩৮ জন বীরাঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই তালিকায় এবার স্থান হয় শেরপুরের আরও ৭ বীরাঙ্গনা।
এর আগে এলাকার সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লীর শহীদ ফজর আলীর স্ত্রী জবেদা বেওয়া, শহীদ বাবর আলীর স্ত্রী জোবেদা বেওয়া, শহীদ কাইঞ্চা মিয়ার স্ত্রী আছরন বেওয়া, শহীদ আব্দুল লতিফের স্ত্রী হাসেন বানু এবং রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের শহীদ বাদশা মিয়ার স্ত্রী আয়শা বেওয়া, তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী শরফুলি বেগম ও মোজাফফর আলীর স্ত্রী বিবি হাওয়া মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পান।
এ ব্যাপারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও ওইসব বীরাঙ্গনা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরে পাওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানাই। শেরপুর জেলায় ২ দফায় সোহাগপুর বীরকন্যাপল্লী ও রাঙ্গামাটিয়া খাটুয়াপাড়া গ্রামের ১৪ জন বীরাঙ্গনা নারী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি লাভের পরও আরও কয়েকজনের নাম অপেক্ষমাণ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তারাও তালিকাভূক্ত হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে হানা দিয়ে নাম না জানা ৪০ জনসহ ১৮৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। একই সাথে তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় ১৯ নারী- যাদের মধ্যে বেঁচে আছেন এখন ১২ জন। আর একই বছরের ৬ জুলাই কাটাখালী ট্র্যাজেডির অংশ হিসেবে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন বেশ কয়েকজন নারী। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওইসব নারীরা বীরাঙ্গনা হিসেবে আলোচিত হলেও স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও তাদের ছিলো না কোনো স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন। ওই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণায় বীরাঙ্গনাদের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিসহ সমভাবে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেয় সরকার।