জগন্নাথ দেবের উল্টোরথ যাত্রা
প্রকৌশলী প্রাঞ্জল আচার্য্য
উল্টো রথযাত্রা বা ফেরা রথযাত্রার মাহাত্ম এই যে- জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রা নয় দিন গুন্ডিচা মন্দিরে দেবীর সেবা গ্রহণ করার পর পুনরায় শ্রীক্ষেতের নীলাচলে নিজের ধামমন্দিরের উদ্দেশ্যে রথেযাত্রা লীলা করা। গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথদেবের নয় দিন অবস্থান কেন। কেইবা গুন্ডিচাদেবী? তিনি ছিলেন বৃন্দাবনের বৃন্দাদূতী। তার আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ভগবান কথা দিয়েছিলেন- কলিকালে আমি তোমার কুঞ্জবিহারে একটানা নয় দিন অবস্থান করবো। দ্বাপর যুগে এই গুন্ডিচা দেবী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের দীক্ষাগুরুদেব আচার্য্য সান্দিপনী মুনীর কন্যা। সান্দিপনী মুনীর পুত্রকে দৈত্য শঙ্খাসুর পঞ্চজন সাগরে আটক রেখেছিল। সান্দিপনী মুনী পুত্রকে উদ্ধার করে আনার জন্য কৃষ্ণ ও বলরামকে অনুরোধ করেছিলেন। গুরুদেবের আদেশ পালন করে শ্রীকৃষ্ণ দৈত্য শঙ্খাসুর পঞ্চজনকে বধ করে মুনীর পুত্রকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এতে মুনিসহ সকলেই অত্যন্ত প্রসন্ন হন। তাই মুনির কন্যা গুন্ডিচাদেবী শ্রীকৃষ্ণের প্রকৃত পরিচয় জানতে পেরে তার সেবা করতে চেয়ে প্রার্থনা করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ কথা দেন ‘নীলাচলে অবস্থানের সময় বছরে নয় দিন আমি তোমার সেবা গ্রহণ করবো।’
স্কন্দপুরাণ থেকে জানা যায়, গুন্ডিচাদেবীকে দেয়া কথা রাখতেই জগন্নাথদেব তার পরমভক্ত মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্নকে আদেশ দিয়েছিলেন, ‘আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় যদি পুষ্যা নক্ষত্র পড়ে, তাহলে ঐ দিনটিতে সুভদ্রার সঙ্গে আমাকে ও বলরামকে রথে আরোহন করিয়ে গুন্ডিচা মন্ডপে নিয়ে যাবে।’ আর তাই গুন্ডিচা মন্দিরে নয় দিন অবস্থানের পর ফেরার পালা। আর তাই শুক্লা দশমীতে উল্টোযাত্রা।
গুন্ডিচা মন্দিরে অবস্থানের সময় লক্ষ্মীদেবী জগন্নাথদেবের সাথে দেখাও করতে গিয়ে ছিলেন কিন্তু দয়িতাপতিরা তাঁকে প্রবেশ করতে দেননি। গুন্ডিচা মন্দির থেকে ফেরার সময় ভোগারতি নিবেদন করা হয়। কিছুক্ষণ চলার পর অর্ধমসিনি মন্দিরের কাছে যাত্রা বিরতি করা হয়। সেখানে গুন্ডিচাদেবীর দেয়া পোড়া পিঠার ভোগ নিবেদন করা হয়। জগন্নাথদেব পোড়া পিঠা খাওয়ার পর আবার যাত্রা শুরু হয়। শেষে রথ মন্দিরের কাছে পৌঁছালে লক্ষ্মীদেবী রাজা জগন্নাথদেবকে অভিমান নিয়ে দর্শন করতে আসেন। কারণ এ যাত্রায় লক্ষ্মীদেবীকে সাথে নেয়া হয়নি। এই লক্ষ্মী-নারায়ণ ভেটের পরপরই মন্দিরের বাইরেই হয় অধরপনা ভোগ। অপমানিত লক্ষ্মীদেবী মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেন। তিনি জগন্নাথদেবের দেয়া মূল্যবান উপহার সামগ্রীও গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। অনেক কাকুতি-মিনতির পর লক্ষ্মীদেবীর অভিমান ভাঙ্গে। তিনি মন্দিরের দরজা খুলতে রাজি হন। পরে জগন্নাথদেব নিজ মন্দিরের রতœসিংহাসনে আসীন হন। রথযাত্রার মতো বিশাল অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে এভাবেই।
লেখক: ভক্তিশাস্ত্রী ইসকন, স্বামীবাগ, ঢাকা