বিশেষ গোষ্ঠীর কবলে রাজধানীর পশুর হাট
শাকিল আহমেদ: আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর ২০টি স্থানে বসছে অস্থায়ী পশুর হাট। তবে এবারও বিশেষ গোষ্ঠীর দখলে রাজধানীর পশুর হাট। দুই সিটি করপোরেশনে ১২টি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকায়। আর দরপত্র পড়েনি ৮টিতে।
২০১১ সালে ঢাকা অবিভক্ত সিটি কর্পোরেশনের ১৩টি হাটের ইজারামূল্য ছিল সাত কোটি ৩২ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১ টাকা। পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের ২২ হাটের ইজারা মূল্য দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ২৩টি হাটের ইজারা মূল ছিল ২৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মোট ২০ হাটের দরপত্র আহ্বান করে। এর মধ্যে প্রথম দফায় দুই কর্পোরেশনের ৬টি করে ১২টি হাটের ইজারামূল্য পাওয়া গেছে ১২ কোটি ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭১২ টাকা। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এবার কোরবানি উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৩টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৭টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। এছাড়া গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটটিও কোরবানির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তরে ৬টি হাট ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৬২ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে। আশিয়ান সিটি পশুরহাটের কোন টেন্ডারই জমা পড়েনি আগামী ২৪ জুলাই এই হাটের দ্বিতীয় দফায় টেন্ডারবক্স খোলা হবে।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে ১৩ টি পশুর হাটের মধ্যে ৬টি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৯৭ হাজার ১৫০ টাকায়। এছাড়া মেরাদিয়া পশুর হাট, ব্রাদার্স ইউনিয়ন বালুর মাট, ধুপখোলা, ধনিয়া, আরমানিটোলা, কমলাপুর ষ্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠ। এই সাতটি হাটের সিডিউল বিক্রি হলেও গত ১৯ জুলাই দ্বিতীয় দফায়ও টেন্ডার বক্সে কোন দরপত্র জমা পড়েনি।
একাধিক ইজারাদার বলেন, হাট ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৩টি দরপত্র জমা পড়তে হয়। সাধারণ ইজারাদাররা দরপত্রই কিনতে পারেননি। দু-একজন কিনলেও ভয়ে জমা দিতে পারেননি। ফলে প্রভাবশালীচক্র পছন্দমতো দর দিয়ে হাটগুলো ইজারা নিয়েছে। আবার কয়েকটি হাটের ক্ষেত্রে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। সেগুলো অতীতের মতো ঈদের আগ মুহূর্তে দলীয় লোকদের দিয়ে পরিচালনা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ওপেন টেন্ডার করি। এখানে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। জমা পড়া দরপত্রের কাগজপত্র ঠিক থাকলে শীর্ষ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কে কোনো দল করে, তা বিবেচ্য বিষয় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিএনসিসির ইজারা নেয়া ৬টি হাটের মধ্যে অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। ঢাকা দক্ষিণের হাটগুলোরও একই অবস্থা। ঝিগাতলা হাজারীবাগ অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাটের ২০১১ সালের ইজারা মূল্য ছিল ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে এই হাটের ইজারা মূল্য এক কোটি ১৫ লাখ টাকা হয়েছে। অন্য হাটের তুলনায় এ হাটের দর একটু বেশি উঠলেও এ হাট থেকে ইজারাদারেরা প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লাভ করে যাচ্ছে। কর্পোরেশন চাইলে এই হাটটি আরও বেশি দরে ইজারা দিতে পারে। ঝিগাতলা হাজারীবাগ মাঠ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন ডিএসসিরি ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজি তারিকুল ইসলাম সজিবের ভাই ব্যবসায়ি জাহিদুল ইসলাম রাজিব নামে। নাম না বলতে ইচ্ছুক হাট সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, হাজারিবাগে ১৯৮৪ সাল থেকে কোরবানি পশুর হাট বসে। আমি এই হাটের একজন পার্টনার। ক্ষমতার পালা বদলে যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে তারাই হাটের ইজারা নিয়েছে। তবে ২০১০ সাল থেকে এই হাটটি আমরাই ইজারা নিচ্ছি।
এই বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিয়ম মেনে যদি সব হাট আওয়ামী লীগের লোক পেয়ে যায়, তাহলেও কিছু করার নেই।