৭ম দিনের মতো সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে হামলা, আহত শতাধিক
মাসুদ আলম ও আদম মালেক : বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থি নিহতের প্রতিবাদে ৭ম দিনের মত গতকাল সকাল থেকে শাহবাগ, সাইন্স ল্যারেটরী রোড মোড়, ফার্মগেটসহ রাজধানীর প্রধান সড়কে লাইসেন্স চেক শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট গতকালও অভ্যাহত থাকায় সকাল থেকেই নগরীতে গণপরিহন ছিল না। কেবল বিআরটিসি বাস চলতে দেখা গেছে। গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে।
এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে জিগাতলায় এক শিক্ষার্থিকে গুলি করে হত্যা, চার শিক্ষার্থিকে ধর্ষণ ও চোখ উপড়ে ফেলার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থি, ছাত্রলীগ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্রিবত অবস্থায় পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় শিক্ষার্থিরা ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে হামলা চালালে শক্ষার্থিদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থি, সাংবাদিক, সরকার দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রায় শতাধিক আহত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে ধানম-ি জিগাতলা এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থিরা জড়ো হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থির সংখ্যা বাড়তে থাকে। শ’ শ’ শিক্ষার্থি সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা দুইটার দিকে বিজিবি গেটের সামনে শত শত শিক্ষার্থির ওপর হঠাৎ হেলমেট পরা, লাঠি হাতে ২৫/৩০ জন যুবক হামলা চালায়। ওই সময় বিজিবির সদস্যরা গেট থেকে সামনে এসে যুবকদের থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও হামলাকারীদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে এক শিক্ষার্থি নিহতের গুজব ছড়িয়ে পড়লে সায়েন্স ল্যাবরেটরী এলাকায় অবরোধকারী শিক্ষার্থিরা ছুটে আসে। পরবর্তীতে তারা একযোগে আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে হামলা চালালে সেখানে অবস্থানরত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে শিক্ষার্থিরা পিছু হটে সীমান্ত স্কয়ারের সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার জানান, হর্ঠাৎ শিক্ষার্থিরা হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে শিক্ষার্থিরা বলছে, সায়েন্স ল্যাবরেটরী এলাকা থেকে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে যায়। পরে আমরা জানতে পারি এসব খবর গুজব। আপনারা এসবে কান দিবেন না।
সকালে যাত্রাবাড়ীতে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থিরা। পরে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ এবং পরিবহন শ্রমিকদের বাধার মুখে পিছু হটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টা থেকে উত্তর যাত্রাবাড়ীতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন।
তবে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে কোনো শিক্ষার্থী অবস্থান নিতে পারেনি। ফ্লাইওভারের নিচে সকাল থেকেই পুলিশের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক পরিবহন শ্রমিক অবস্থান নেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম অণু লোকজন নিয়ে ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থিরা পালিয়ে যায়।
একই সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও লাইসেন্স পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা। দুপুরের দিকে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে তারা। পরে সন্ধ্যায় তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। সকালে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ সেøাগান দিতে থাকে। এতে মিরপুর ১২ নম্বর হয়ে কালশী পর্যন্ত ও কচুক্ষেত।
মিরপুর ২ ও ১ নম্বর পর্যন্ত যানবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা ৪/৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। চালকদের মারধর করা হয়। একইসময় শাহবাগ সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থিরা। পুলিশের গাড়ির বিরুদ্ধেও মামলা নিতে বাধ্য করে তারা। বিকেলে অবরোধ তুলে নেয়। ছাত্রলীগও শিক্ষার্থিদের বোঝানোর চেষ্টা করে। সকালে উত্তরা ও বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিকেলের দিকে রাস্তা থেকে সরে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।