কোরবানির পশুর চামড়ার দাম আরও কমলো প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৪৫, খাসি ১৮ টাকা
হুমায়ুন কবির খোকন: বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও আসন্ন ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার দর আরো কমিয়েছে সরকার। এবছর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম হবে ঢাকা শহরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়াও সারাদেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম হবে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং প্রতিবর্গফুট বকরির চামড়ার দর নির্ধারিত হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের সামনে এই ঘোষণা দেন।
গত বছরের চামড়ার দরের তুলনায় এবার গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গ ফুটে পাঁচ টাকা কমেছে। গত বছর প্রতি ফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছিল সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। একইভাবে খাসির চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে প্রতি ফুটে কমেছে ২ টাকা করে। গত বছর এর দর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। অন্যদিকে, বকরির চামড়াতেও এবার প্রতি বর্গ ফুটে ২ টাকা করে দাম কমিয়েছে সরকার। গত বছর এই দর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা।
গত বছরের চেয়ে কোরবানির চামড়ার দাম কমার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মূলত দুটি কারণে এবার কোরবানির চামড়ার দাম কমানো হয়েছে। প্রথম কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে।
দ্বিতীয়ত সাভারে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপিত হলেও এখনো তা পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে পারেনি। নানা ধরনের ত্রুটি রয়েছে সেখানে। যে কারণে সেখানে এখনো ঠিকভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হচ্ছে না।
এসময় সরকার চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের বন্ধু। সবাই দেশকে ভালোবাসি। আসলেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চামড়ার সেক্টরটি খারাপ পর্যায়ে আছে। তাই ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতেই দর কম করে নির্ধারণ করে দিয়েছি। ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করার অর্থ জিম্মি হওয়া নয়। দেশের এই ব্যাপক উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অবদান অনস্বীকার্য।
আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এবছর রপ্তানির অন্যান্য খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও চামড়া খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ কমেছে।
চামড়ার দাম কমানোর কারণে চোরাচালানের মাধ্যমে তা দেশের বাইরে চলে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
এসময় ট্যানার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি শাহীন আহমেদ এর কাছে এবছর চামড়া কেনার লক্ষ্য কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো লক্ষ্য এখনো আমরা নির্ধারণ করিনি। কারণ, গত বছরে কেনা চামড়ার ৪০ শতাংশ এখনও মজুত আছে। যার গুণগত মান অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক আমাদের যে ঋণ দিয়েছে তাও অনিশ্চিত। কারণ, গত বছর পাওয়া ঋণ আমরা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন গত বছরের তুলনায় পাঁচ টাকা বাড়িয়ে গরু-খাসি ও বকরির চামড়ার দর প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু, সরকার নির্ধারিত বর্তমান দর তার থেকে ১০ টাকা কম। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১ দশমিক ২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া। এর অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির ঈদের সময়।