ব্যাংক ঋণের ৭১ শতাংশ কোটিপতিদের দখলে
সোহেল রহমান: ব্যাংকিং খাতে কোটি টাকা আমানতকারীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যাও। বর্তমানে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা কোটিপতি আমানতকারীদের চেয়ে অনেক বেশি। গত ৯ বছরে (২০০৯Ñ২০১৭) এক কোটি টাকার অধিক মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ হাজার ৮১২ জন এবং তাদের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭১ ভাগেরও বেশি কোটিপতিদের দখলে। এদের সংখ্যা মোট ঋণগ্রহীতার দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম ঋণগ্রহীতার কাছে যাচ্ছে ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৫১ জন। আর তাদের মোট গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৭৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে ৮১ হাজার ১৮ জন এবং তাদের গৃহীত ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। শতকরা হিসেবে ঋণগ্রহীতার হার মোট ঋণগ্রহীতার মাত্র দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং তাদের মোট গৃহীত ঋণের পরিমাণ ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ প্রবাহের ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে ১ কোটি টাকার অধিক মোট ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৬ জন এবং ২০০৯Ñ১৩ মেয়াদ শেষে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৯৫১ জনে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯Ñ১৭ এক কোটি টাকার অধিক মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ হাজার ৮১২ জন। অর্থাৎ এক কোটি টাকার অধিক মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। গড়ে বছরওয়ারি ১ কোটি টাকার অধিক ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৩০১ জন।
অন্যদিকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে কোটিপতিদের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। যা ছিল ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে কোটিপতিদের মোট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে কোটিপতিদের মোট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এটি ব্যাংকিং খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত নয় বছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণের হার বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।
ব্যাংকিং খাতে ১ কোটি টাকার অধিক আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতার তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোটিপতি আমানতকারীদের চেয়ে কোটি টাকার ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ও ঋণের পরিমাণ বেশি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আমানতকারীদের তুলনায় কোটি টাকা ঋণগ্রহীতার সংখ্যা প্রতিবছরই ৬ থেকে ৭ হাজার বেশি ছিল। ২০১২ সালে এই ব্যবধান কমে প্রায় ৩ হাজারে এসে দাঁড়ায়। পরবর্তী তিন বছর (২০১৩Ñ২০১৫) এক কোটি টাকার অধিক আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল প্রায় কাছাকাছি। এর পরের বছর ২০১৬ সালে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা আবার ৩ হাজার বেড়ে যায়। সর্বশেষ গত বছর (২০১৭) এক কোটি টাকার অধিক আমানতকারীদের চেয়ে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার।
ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণ আমানতকারীদের অধিকাংশই ব্যাংকে টাকা রাখেন সঞ্চয় বা মুনাফা বা নিরাপত্তার জন্য। অন্যদিকে কোটিপতি গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের চেয়ে ঋণ গ্রহণের প্রবণতাই বেশি।