বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির জনককে স্মরণ
হুমায়ুন কবির খোকন: বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে। এ দিবসের শুরুতে সকালে তার প্রতিকৃতি এবং ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দিনটি পালনের অংশ হিসেবে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া-মাহফিল, আলোচনা সভা, দেশব্যাপী গরিব ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করে। এছাড়া রক্তদান কর্মসূচি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচিতে বাঙালির মুক্তির পথপ্রদর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় রাষ্ট্র ও সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিসহ দেশের আপামর মানুষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেতনায় অমর-অবিনশ্বর, আজও তার আদর্শ সমুজ্জ্বল- সমগ্র জাতি যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে তা আবারও প্রমাণ করল।
শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার সকাল থেকেই ফুল হাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবী, সামাজিক সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে বিভন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কাল্রাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়েছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময়ে তার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ত্যাগ করার পরপরই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত তার মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের দাফন করা হয়। কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৭টায় তার পরিবারের সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ বনানী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। বনানী কবরস্থানে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান।
সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও তেজগাঁও চার্চে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর কারওয়ান বাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।
শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালন করেছে। এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।