‘জীবন নিয়ে শঙ্কিত ১০ লাখ রোহিঙ্গা’
আসিফুজ্জামান পৃথিল: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশমুখি ঢল নামবার এক বছর পূরণ হতে যাচ্ছে এ আগষ্টে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ গণহত্যা এবং জাতিগত নিধন শুরু করলে এই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। এ কথাগুলো বলেছেন যুক্তরাজ্যের লেবার দলের এমপি রুশনারা আলি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে লেখা একটি প্রবন্ধে এসব কথা বলেন তিনি।
রুশনারা আলি লিখেছেন, ২০১৭ সালের এই আক্রমণকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ‘নিয়মমাফিক জাতিগত নিধন’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি এই সামরিক অভিযান সম্পর্কে আরো বলেন, ‘আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না যে সেখানে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে।’ যদিও এই আক্রমণ অনেক বেশি পরিকল্পিত এবং ধ্বংস্বাত্বক ছিলো, তবে এটিই প্রথম আক্রমণ নয়। এর আগেও ২০১২ এবং ১৬ সালে এ ধরণের হামলা হয়েছিলো। কিন্তু এর পরেও প্রায় ১০ লাখ এর বেশী রোহিঙ্গা সেখানে খাদ্য, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা বঞ্চিত হয়েও কারাগারের চেয়েও খারাপ পরিবেশে দশকের পর দশক বসবাস করেছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের হামলার পর তাদের আর টিকে থাকা সম্ভব ছিলোনা।
রুশনারা আলি তার বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লিখেছেন, গত মাসে আমি কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে গিয়েছিলাম। যখন আমি সেখানে পৌঁছাই আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না মাত্র ৫ বর্গ মাইলের একটা জায়গায় লাখো মানুষ গাদাগাদিভাবে পলিথিন এবং বাঁশের তৈরি ঘরে বসবাস করছে। কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা ইতোমধ্যে কক্সবাজারকে বাংলাদেশের ৪র্থ বৃহত্তম শহর বলে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে।
ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ে ধাপ কেটে তৈরী করা রাস্তাগুলোকে ভয়াবহ পিচ্ছিল বানিয়ে রেখেছে। পুরো মাটিই ভেজা ছিলো। আমি বাঁশের সেতু থেকে মানুষের পড়ে যাবার এবং গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসকের কাছে না যেতে পারার গল্প শুনেছি। কমপক্ষে ৩০ হাজার শরণার্থী ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তাদের সরিয়ে নেওয়া জরুরী। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার শরণার্থীকে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়েছে। কর্মরত এনজিওগুলো ত্রাণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। বৃষ্টিপাত আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। মায়েরা আমাকে জানিয়েছেন কিভাবে তাদের কন্যাদের তাদের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে ধর্ষণ এবং হত্যা করা হয়েছে। পরিবারগুলো আলাদা হয়ে গেছে কারণ তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন বাবা আমাকে জানিয়েছেন কিভাবে তার চোখের সামনে তার সন্তানকে পুঁড়িয়ে মারা হয়েছে।
বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড় এবং জঙ্গলে। পাহাড় কেটেই তারা নিজেদের আশ্রয় বানিয়েছেন। ফলে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ পরিবেশগত ঝুঁকি। এই পাহাড় যাদের নিবাস সেই বণ্যপ্রাণীরা খাদ্য এবং আশ্রয় এর অভাবে এই বহিরাগত রোহিঙ্গাদের উপরে চড়াও হচ্ছেন। ইতোমধ্যেই বন্য হাতির আক্রমনে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। দ্য গার্ডিয়ান