ঈদে নির্বাচনী প্রচারণায় চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: এবার ঈদুল আযহায় তৃণমূলে পশু কোরবানি ও কেনা কাটা গত ১০ বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রার্থীদের পদচারণা এবং তাদের উপহার সামগ্রী কেনা ও বিতরন এবং ঈদের দিন সকাল থেকে জনসংযোগ এবং ঈদ সেলামিতে নগদ অর্থের প্রবাহ থাকবে লক্ষ্যণীয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রে কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এবার ঈদে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন পশু কোরবানী হবে। এরসঙ্গে চলবে পাড়ায় মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণা। বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এমপি প্রার্থীদের হয়ে জায়গা নির্ধারণ করছেন। মাংস বিতরণ হবে সকাল থেকেই। আবার কেউ কেউ দিনব্যাপী ভোজের আয়োজন করেছেন। এরই মধ্যে গত ১৫ আগস্ট উপলক্ষে অনেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন।
প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, এবার গতবারের চেয়ে ৫০ লাখ বেশি কোরবানী হতে পারে। তবে সরকারি হিসেবে তারা বলেছে, ৬ লাখ বেশি হবে। হিসেব অনুযায়ী, এবার সারা দেশে ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানী হবে। এরমধ্যে গরু, মহিষ, উট, ভেড়া , ছাগল রয়েছে। এটা একটি গড় হিসাব। গতবছরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই হিসাব করা হয়েছে। গতবছর এক কোটি চারলাখ পশু কোরবানী করা হয়েছিলো।
জানা গেছে, ভোটের আগে এটা শেষ ঈদ আয়োজনে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। জেলা শহরের মার্কেট এবং উপজেলা ও বিভিন্ন স্তরের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই ছিলো। এটা তো গেলো ঈদের আগে কথা। আর ঈদের দিন থেকে ঈদ সেলামি এবং নগদ টাকা সহায়তায় ব্যস্ত দিন কাটাবেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এরমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এমপি এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা দলে দলে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সেমাই চিনি, মিষ্টি এবং নানা উপহার নিয়ে হাজির হয়েছেন ঘরে ঘরে।
অর্থনীবিদরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতারা নির্বাচনী ঈদকে ঘিরে কী পরিমাণ টাকা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়ে গেছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও তা আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার কম নয়। তাদের ভাষ্য, ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ২০০ আসনে গড়ে দুজন করে ৪০০ বিত্তশালী রাজনীতিবিদ রয়েছেন। যারা এবারের ঈদকে ঘিরে দান-খয়রাত-বকশিশ ও শুভেচ্ছা উপহার দেয়ার মধ্য দিয়ে এলাকায় নিজের শক্তিশালী অবস্থান গড়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আবার তাদের পক্ষে ঘনিষ্ঠজন ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধাভোগীরাও অনেকে গোপনে-প্রকাশ্যে বিপুল টাকা খরচ করছেন। এককথায় নির্বাচনী ঈদকে ঘিরে গ্রামে টাকার প্রবাহ সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা জানান, ঈদ উপলক্ষে চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্ত বোনাসের একটি বড় অংশই যায় গ্রামে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে গ্রামীণ কিছু পণ্যের চাহিদা শহরে বাড়ে। এসব পণ্যের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের আয়ও বাড়ে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সরগরম করে তোলে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য মতে, এ শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এসব শ্রমিকের ৯৫ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা। যার ৭০ শতাংশই ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যান। তাই কয়েক মাস আগ থেকেই তারা টাকা জমাতে থাকেন ঈদের জন্য। এর সঙ্গে বেতন- বোনাসের পুরো অর্থই খরচ হয় ঈদকে ঘিরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা প্রচুর প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছে। সারা বছর প্রবাসী আয়ের খরা থাকলেও জুলাই ও আগস্ট মাসে রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঈদের দিন থেকে নির্বাচনী তৎপরতা চালাবেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও মাঠে থাকবেন। এরইমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের দিচ্ছেন ঈদের বকশিশ, পাঞ্জাবি-পায়জামার মতো উপঢৌকন। ছবি সংবলিত পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার এবং দেয়াল লিখনের মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তারা। ঈদ বকশিশেও তারাও খরচ করবেন দু’হাতে।
জানা গেছে, এমপি প্রার্থীদের কেউ কেউ গভীর রাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলের নিষ্ঠাবান দরিদ্র নেতাকর্মীদের হাতে যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি ও নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে গ্রামের একেবার অস্বচ্ছল মানুষের হাতেও এবার উপহার ও নগদ টাকা গিয়েছে।
ঈদকে ঘিরে এরইমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে আর্থিক লেনদেনও প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতবদল হয়, যা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চাঙ্গা করে তোলে। এর মধ্যে ঈদুল আযহায় সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় পশু কোরবানীতে।