আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৩
আগামী ৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে: প্রধানমন্ত্রী
উম্মুল ওয়ারা সুইটি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতা শুধু ভোগের জন্য নয়, ক্ষমতা ত্যাগেরও বিষয়। মানুষের জন্য দেশের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই মূল বিষয়। বাংলাদেশ ২১০০ সালে কেমন হবে সেটা মাথায় রেখে আমরা ১০০ বছরের পরিকল্পনা করছি। যে গতিতে বাংলাদেশ এগুচ্ছে তাতে আগামী ৪১ সালে এই বাংলাদেশ উন্নত বাংলাদেশ হবে বলে বিশ্বাস করি।
তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথিগুলো নিয়ে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খ-ে প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রথম খ-ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল বিকেল ৪টায় বইটির সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রী এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু পারেনি। দিন যতই যাচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস ততো সমৃদ্ধ হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নাম আরো উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে কাজ করছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অগ্রগতি দেখে পাকিস্তানের অনেক নাগরিক বলছে, এদেশকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু সংগ্রাম করে গেছেন। তার সংগ্রাম ছিল এ দেশের মানুষকে শোষণ বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করা। তৎকালীন পূর্ব বাংলা এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল সে বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বার বার জেল খেটেছেন, বার বার তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল এই দুই বছরে তৎকালীন পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথিগুলো নিয়ে ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে ১৪ খ-ে প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রথম খ-ের মোড়ক উন্মোচন করা হলো। তারা বঙ্গবন্ধুর চলাফেরা, গতিবিধির বিপক্ষে যে সমস্ত নোট দিয়েছেন সেগুলো সমৃদ্ধ করে বই প্রকাশ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা বাকি খ-গুলোও প্রকাশ করতে চাই। এ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তথা সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নামে স্পেশাল ব্রাঞ্চে খোলা ব্যক্তিগত ফাইলে সংরক্ষিত ডকুমেন্ট সংকলন করা হয় ১৪ খ-ের এ বইটিতে। তথ্যগুলো তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশ আইবির রুটিন কাজের অংশ হিসেবে সংগ্রহ ও সংরক্ষিত হয়েছিল। বইটিতে স্থান পেয়েছে ভাষা আন্দোলন, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তকরণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন, আওয়ামী লীগের জন্ম, শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠিপত্র, বিভিন্ন লিফলেট বিতরণ, তার বক্তব্য বিবৃতি, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার, কারাবরণ, কারাগারে আত্মীয়-স্বজন ও নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ ইত্যাদি।
বইটির প্রথম খ- ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত হলেও এ খ-ে ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পূর্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা ও মানবদরদি মনের পরিচয় পাওয়া যায়। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের প্রথম দিকের জানা-অজানা অনেক তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে এ খ-টিতে।
বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধাদের। উৎসর্গ পত্রে লেখা আছে- ‘বঙ্গবন্ধু তার সংগ্রামী জীবনের সকল সহযোদ্ধার প্রতি…’। বইটি প্রকাশ করছে হাক্কানী পাবলিশার্স। প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার। প্রতিটি খ-ের প্রচ্ছদের ডিজাইন একই। ৫৮২ পৃষ্ঠা সম্বলিত প্রথম খ-ের মূল্য ৯০০ টাকা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংকলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভপতি শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ ২৩ বছরের সেইসব গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৪ খ-ের এই সংকলন প্রকাশ করছে হাক্কানী পাবলিশার্স। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
তরুণ শেখ মুজিব নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে কেমন করে বাংলার অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হলেন- সেই পথচিত্র যেমন এই বইয়ে এসেছে, সেই সঙ্গে এসেছে বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে চলার মানচিত্র। এসব কারণে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সংকলনকে বিশেষজ্ঞরা বর্ণনা করছেন ‘অমূল্য সম্পদ’ হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহেনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদও ছিলেন অনুষ্ঠানে।