গার্মেন্টস শ্রমিকদের সর্বনি¤œ বেতন ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ
আনিসুর রহমান তপন ও আরিফুর রহমান তুহিন : গার্মেন্টস শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যুনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলণে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এতে মূল বেতন ৪ হাজার ১শ টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৬’শ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৬৫০ টাকা ও অন্যান্য ধরা হয়েছে খাদ্য কেনায়।
এ সময় মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু ও বেগম শামছুন্নাহার ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। স্থায়ী চার সদস্যের সঙ্গে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ও শ্রমিকদের একজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত এই মজুরি বোর্ড সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মজুরি নির্ধারণ করেছে।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বর থেকেই নতুন এই মজুরি কার্যকর হবে। অন্যদিকে মুজিবুল হক চুন্নু জানান, গেজেট প্রকাশের পরই শ্রমিকদের জন্য ঘোষণা করা বর্ধিত বেতন কার্যকর হবে।
প্রসঙ্গত, শ্রম আইনে প্রতি ৫ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করার কথা বলা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মজুরি কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করে মজুরি কাঠামো ঘোষণা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি কার্যকরের বাধ্যবাধকতা ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে চলতি বছর ১৪ জানুয়ারী নতুন মজুরি কাঠামো নির্ধারণে বোর্ড গঠন করে সরকার।
মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলামসহ এর অপর ৩ স্থায়ী সদস্য হলেন, মালিকপক্ষের প্রতিনিধি কাজী সাইফুদ্দীন আহমদ, শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ফজলুল হক মন্টু ও নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। তবে বোর্ডের সভায় মালিকপক্ষের অস্থায়ী প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি জাতীয় শ্রমিক লীগের নারী বিষয়ক সম্পাদিকা বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বোর্ডের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আরও জানান, বৈদেশিক মুদ্রার ৮৪ শতাংশ অর্থ আয় করে তৈরি পোশাক খাত। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের কথা শুনে শ্রমিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী সবদিক বিবেচনা করেই নতুন এই মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মজুরি বোর্ডের মালিকপক্ষের সদস্য ও বাংলাদেশ নিটওয়ার প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সহ-সভাপতি ফজলে শামিম এহসান বলেন, যেখানে সরকার কোনো বিষয় নির্ধারণ করে দেয় সেখানে আমাদের বলার মত কিছু নেই। তবে সরকারকেও দেখতে হবে, বর্তমান অবস্থায় এই বেতন প্রদানের পর পোশাক শিল্প মালিকরা যেন টিকে থাকতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে কিছু দাবি তুলে ধরেছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক নেতা জানান, বর্তমানে পোশাক শিল্পের বাস্তবতায় ৮ হাজার টাকা মজুরি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এর ফলে অনেক কারখানাই আর্থিক সমস্যায় পরতে পারে। গত কয়েকবছর যাবৎ উৎপাদন খরচ বাড়লেও পণ্যের মূল্য বাড়ছে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ১৬ হাজার টাকা সর্বনি¤œ মজুরির বিপরীতে অর্ধেক নির্ধারণ করা হয়েছে। আশঙ্কার বিষয় এর ফলে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় কি না! একারণে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।