সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ বলছেন মোদী চোর: রাহুল
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : ‘সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চোর বলেছেন। অথচ তিনি এখনও চুপ।’ এইভাবে গতকাল শনিবার মোদিরর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। গত শুক্রবারই ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কো ওলাঁদে এক ওয়েবসাইটকে সাক্ষাৎকারে বলেন, রাফায়েল নিয়ে চুক্তির সময় ভারত সরকারই তাদের বলেছিল, অনিল আম্বানিকে যন্ত্রাংশ বানানোর অর্ডার দেওয়া হোক।
শনিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট সরাসরি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বললেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এর পরেও মোদী চুপ করে আছেন।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওলাঁদে স্পষ্ট বলেছেন, মোদীই রাফায়েল চুক্তির সময় অনিল আম্বানির নাম করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাকে যন্ত্রাংশ তৈরির অর্ডার দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। মোদীর উচিত এই অভিযোগের জবাব দেওয়া। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। রাফালে চুক্তি আসলে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপর কেন্দ্রের করা এক লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক।’
কংগ্রেস সভাপতির আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন ,‘রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ভীষণভাবে নিন্দনীয় এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।’ তিনি বলেন, ‘ইউপিএ সরকার রাফায়েল চুক্তি চূড়ান্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে গেছে ‘ঘুষ’ নিশ্চিত না হওয়ার কারণে। ফরাসি কোম্পানি ডুসল্টের সঙ্গে রিলায়েন্সের চুক্তি হয়ে গিয়েছিলো ২০১২সালেই।’
অন্যদিকে কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের শহিদদের অপমান করেছেন। দেশের মানুষদের আত্মার অবমাননা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অনিল আম্বানি যৌথভাবে এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছেন সেনাবাহিনীর উপর, যা লজ্জাজনক। এর ফলে এক লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকার লাভ হয়েছে অনিল আম্বানি এবং মোদির।
প্রসঙ্গত, রাফালে চুক্তি নিয়ে বরাবরই মোদীকে নিশানা করেছেন রাহুল। গতকাল শনিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল বলেন, ‘ওলাঁদ যদি মিথ্যা কথাই বলেন, তাহলে মোদী কোনও প্রতিক্রিয়া না দিয়ে নীরব রয়েছেন কেন। প্রধানমন্ত্রীর তো পরিষ্কার করে জানানো উচিত দেশবাসীকে যে সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্টের অভিযোগ সত্যি নাকি মিথ্যা। এই প্রথম অন্য কোনও দেশের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলছেন। জওয়ানদের ভবিষ্যতকে নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকরতো বলেছিলেন, যখন রাফায়েল চুক্তি বদল করা হয় তখন তিনি গোয়ায় মাছ কিনছিলেন। ওই প্রসঙ্গে কিছুই জানতেন না। বর্তমান প্রতিক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আজ পর্যন্ত রাফায়েল চুক্তির সম্পূর্ণ দাম জানাননি। দেশবাসী জেনে গিয়েছেন দেশের চৌকিদারই চোর।
ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ওলাঁদে শুক্রবার বলেছিলেন, অনিল আম্বানির ভুঁইফোঁড় সংস্থাকে রাফায়েল বরাত পাইয়ে দিতে পুরনো চুক্তি বাতিল করে নতুন চুক্তি হয়েছিল। তারপরই ভারতে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়ে মোদী সরকার। কেন্দ্রকে স্বস্তি দিয়ে শুক্রবার রাতের মধ্যেই অবশ্য ফরাসি সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, রাফায়েল চুক্তির সময় ভারতীয় কোম্পানি পছন্দের দায়িত্বে তারা হস্তক্ষেপ করেনি। ফরাসি কোম্পানির পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল তারা কোন পার্টনার পছন্দ করবে। সেই মতোই চুক্তি হয়েছিল।
তবে গতকাল শনিবারও ওলাঁদের অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, নিজের বক্তব্যে অনড় আছেন ওলাঁদে। কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দলই এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে রাফালে চুক্তি নিয়ে ২০১৯–সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি সরকারকে বিঁধতে।
কংগ্রেস দপ্তর সূত্রে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, রাফায়েল চুক্তির ভিতরেও অনেক গোপন তথ্য আছে তা দেশবাসীর কাছে লুকিয়ে রেখেছে কেন্দ্র।
আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করেছেন, দেশবাসী সত্যিটা জানতে চাইছে। কিন্তু কেন্দ্রের প্রতিটা বিবৃতিই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি টুইটারে অভিযোগ করেন, রাফায়েল চুক্তির পুরোটাই দুর্নীতিতে ভরা। কেন কেন্দ্র এমন একটা নির্দিষ্ট কোম্পানির পক্ষপাতী হয়ে আছে যাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কোনও অভিজ্ঞতা নেই।