খুলনায় ব্যাট হাতে আবারও ব্যর্থ আশরাফুল
নিজস্ব প্রতিবেদক : খুলনায় দ্বিতীয় সুযোগও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হওয়া মোহাম্মদ আশরাফুল। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে বিসিবির প্রস্তুতি ম্যাচে প্রথম ইনিংসে এক রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে একটু বাড়িয়েছেন। তবে খুব বেশি না। ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও গতকাল মাত্র ১৩ রানেই শেষ হয় বাংলাদেশ সাবেক অধিনায়কের ইনিংস
জাতীয় দলের স্কোয়াডের বাইরে থাকা ক্রিকেটাদের নিয়ে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ আয়োজন করা হয় খুলনায়। ২৪২ রানের লক্ষে বিসিবি লাল দল ব্যাট করতে নামে। ১২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন আশরাফুল। এদিনও আবু নাসের স্টেডিয়ামের একটি গ্যালারি পূর্ণ ছিল দর্শকে। আশরাফুল মাঠে নামার পরেই বোঝা যায়, দর্শকরা এসেছেন আশরাফুলের জন্যই। পুরো গ্যালারি তখন আশরাফুল ধ্বনিত মুখরিত। আশরাফুল শুরুটাও করলেন দেখেশুনে। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন। পরের ৬টি বল ডট। এরপরেই বেরিয়ে আসেন খোলস ছেড়ে। পরের বলে খালেদকে বাউন্ডারি মারেন। পরের ওভারে এবাদতের বলে ওভার বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। তবে হঠাৎই ছন্দ পতন।
এবাদতের পরের ওভারে আবারও উড়িয়ে মারেন আশরাফুল। বাউন্ডারি লাইনে অনেকটা দৌড়ে এসে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন ফজলে রাব্বী। সাথে সাথে থেমে যায় গ্যালারির ধ্বনি। আশরাফুলও শেষ করেন আরেকটি সম্ভাবনামায় ইনিংস। সব মিলিয়ে ২০ বল খেলে ১৩ রান করেন অ্যাশ। এ ম্যাচের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিসিবির কোন দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন আশরাফুল।॥
বাংলাদেশ নামের ঘন্টাধ্বনি
১। এই তো মাত্র তিনদশক আগেই বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশ ছিল ‘আ-ার ডগ’। শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্থান তো দূরের কথা জিম্বাবুয়ের মত দেশকে কোনমতে হারালেও সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত, পাড়া-মহল্লায় ‘গরু জবাই করে ভোজ দেয়া হত। সময় বদলেছে। বিশ্বের সকল ক্রিকেট খেলুড়ে দেশকে বাংলাদেশ অন্তত একবার করে হারাবার গৌরব অর্জন করেছে। সেই বিবেচনায় ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিশ্বকে হারিয়েছে। স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে রক্ষা করা যেমন কঠিন তেমনই ক্রিকেটের এই সাফল্য ধরে রাখাও বাংলাদেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। সম্প্রতি দুবাইয়ের তপ্ত মরুর প্রচ- রোদ্র তাপে দর্শকেরা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের কাছে ‘উপকথার মত বর্ণাঢ্য এবং বিস্ময়কর ‘ এক খেলা উপহার পেল।
২। ‘ইনজুরি’ ক্রিকেটের এক বৈশ্বিক সমস্যার নাম। তামাম দুনিয়ায় সব দলের প্রায় সব খেলোয়াড়ই তাদের লাইফ টাইমে অন্তত একবার ইনজুরি সমস্যায় ভুগেছেন। এবার ইনজুরি নামের দুর্ভাগ্য তামিম ইকবালের পিছু ছাড়ছিল না। সুরাঙ্গা লাকমলের এক একটি শটবল সরাসরি লেগেছিল তামিমের বাঁ হাতে। হাসপাতালে সিটি স্ক্যানে ‘চিড়’ ধরা পড়ল দুই জায়গায়। তামিমের নিজের ভাষায়ই শোনা যাক ‘ইনজুরির বিবরণ ‘ঘুষি পাকালে হাতের যে চারটি হাড় বেরিয়ে থাকে, তর্জনীর ওখানটায় দুই যায়গায় ভেঙেছে। ছয় সপ্তাহের মত সময় লাগবে সেরে উঠতে। তবে অস্ত্রোপচার যদি লাগে তবে সময় আরো বেশী লাগবে। এর আগেও ডান হাতে চোট লেগেছিল। দুই হাতে ইনজুরি নিয়ে আর যাই হোক ক্রিকেট খেলা চলে না !’
৩। দুবাইতে এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হল বাংলাদেশ। প্রথমেই বাংলাদেশের ভাগ্যে ব্যাটিং এর পালা আসল। ল্যাঠা বেড়ে গেল। জিতবার জন্য ইপ্সিত রানের টার্গেট করা যাচ্ছিল না। বিধি বাম। শুরুতেই দুই, তিনটা উইকেট পড়ে গেল। দলনায়ক মুশফিকের জন্য জয় ছিনিয়ে আনাটা কঠিন হয়ে পড়ল। নবম ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজ যখন আউট হলেন তখনও বাংলাদেশ ইনিংসের ১৯ বল বাকী। মুশফিকুর রহিম তখন রানের প্রবল তৃষ্ণায় তৃষিত চাতকের মত একজন সহযোদ্ধা কমরেডকে খুঁজছেন। তখন তামিম ইকবালই শেষ ভরসা। বাঁধা দিলেন দলের ফিজিও। কোচ স্টিভ রোডসেরও মানা ছিল। কিন্তু তামিমের বুকের ভিতর এক ঘন্টা ধ্বনি নিরন্তর বাজছিল। সেই ঘন্টা ধ্বনি তামিমকে আর সাজঘরে পুতুলের মত বসিয়ে রাখতে পারলো না। মাঠে নেমে এলো ইনজুরি জর্জর তামিম। তার আত্মপ্রত্যয় ছিল সে পারবে। তামিম আর মুশফিকের জুটির অসাধারণ রসায়ন লঙ্কাকে আরেকবার বধ করল। সারা বিশ্বের লাখো লাখো ক্রিকেট অনুরাগী বিস্ময়মাখা চোখে রুদ্ধশ্বাসে দেখল হ্যাঁ, তামিম পেরেছে। তাকে পারতেই হয়েছে। কেন না তার বুকের ভিতর যে ঘন্টা ধ্বনি নিরন্তর বেজেছিল সেই ঘণ্টা ধ্বনির নাম ‘বাংলাদেশ যে’!
লেখক, উপ অধিনায়ক ,আর্মড ফোর্সেস ফুড এন্ড ড্রাগস ল্যাবরটরী