মোংলা ও বুুড়িমারী বন্দরে দুর্নীতি শতভাগ : টিআইবি
ফয়সাল মেহেদী : ২০টি শ্যালো মেশিনের ডিজেল ইঞ্জিন কায়িক পরীক্ষণের নামে আমদানিকারকের কাছে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন মোংলা কাস্টমস হাউজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। চালানের নথিপত্র ঠিক থাকলেও দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তি এড়াতে ২০ হাজার টাকায় রফা করতে বাধ্য হন ঐ আমদানিকারক। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে এভাবেই মোংলা এবং বুড়িমারী বন্দর ও কাস্টমস হাউজের সবক্ষেত্রে শতভাগ দুর্নীতি হয়। বন্দর দুটিতে বছরে ঘুষ বাণিজ্যের পরিমাণ ৩১ কোটি টাকা।
জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে টিআইবি। গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন সংস্থাটির কর্মকর্তা মনজুর ই খোদা ও মো. খোরশেদ আলম।
টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং পণ্যের ধরন, গুণগত মান, ওজনসহ সবকিছু ঠিক থাকলেও প্রতিটি ধাপে আদায় করা ঘুষ। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা দিয়ে গাড়ি আমদানিতে প্রতিটি গাড়ির শুল্কায়নে মোংলা কাস্টমস হাউসের ছয়টি বিভাগে ৪ হাজার টাকা এবং ছাড় করতে বন্দরের ১০টি স্থানে গাড়ি প্রতি ১ হাজার ৭১৫ টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয়। এছাড়া আমদানি পণ্যের প্রতি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। বিকেল পাঁচটার মধ্যে সেই পণ্য ছাড় করতে হলে ৬ হাজার টাকা এবং পাঁচটার পরে ছাড় করতে হলে বাড়তি ১ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া বন্দরে প্রতিটি জাহাজ আগমন ও বহির্গমনে কাস্টমস হাউসে ৮ হাজার ৩৫০ টাকা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম স্থলবন্দর বুড়িমারী দিয়ে পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ধাপে প্রতিটি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে গড়ে ন্যূনতম ২০৫০ টাকা এবং একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে গড়ে ন্যূনতম ১৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয় কাস্টমস স্টেশন ও বন্দর বিলিং সেকশনে। এর মধ্যে শুল্ক স্টেশনের তিনখাতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে দেড় হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর আমদানি করা পণ্য ছাড় করতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা এবং রপ্তানিতে ঘুষ দিতে হয় ২০০ টাকা। ২০১৬-১৭ সালে পণ্যের শুল্কায়ন ও পণ্যছাড়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হয়েছে। একইসময়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বুড়িমারী স্থলবন্দর আদায় করেছে ৪৮ লাখ টাকা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধান ও গবেষণায় আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি, বন্দর দুইটিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কাস্টমসের সব পর্যায়ে শতভাগ দুর্নীতি রয়েছে। আমাদের কাছে শত শত তথ্য প্রমাণ থাকলেও আইনিভাবে প্রমাণের কোনো সুযোগ টিআইবির নেই। তিনি বলেন, বন্দর অপেক্ষা কাস্টমসে দুর্নীতির পরিমাণ বেশি। তবে কে বেশি, কে কম সেটা বড় কথা নয়। সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি শতভাগ। আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা ও দাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কমানো গেলে দুর্নীতি কমে যায় বলেও জানান তিনি।