আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
এক বছরে ৮৬ লাখ মেট্রিকটন জ্বালানি তেল হ্যান্ডলিং করেছে বিপিসি
শাহীন চৌধুরী : দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন যানবাহন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে জ্বালানি নির্ভর শিল্প কারাখানা। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়েছে অনেক। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে যেখানে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল হ্যান্ডেলিং করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সেখানে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসে এই চাহিদা দাড়িয়েছে ৮৬ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। বিশাল এই চাহিদা তুলনামূলক কম লোকবল দিয়েও হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে বিপিসি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানায়, বিপিসির এখন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করে নতুন উদ্যোমে শুরু করেছে গণমুখী প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সাশ্রয়ী ও নিরাপদে বিমানের জ্বালানি (জেট ফুয়েল) সরবরাহ নিশ্চিত হবে। গত ছয় বছর ধরে আটকে ছিলো বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল ট্যাঙ্ক ও রেলওয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান (সাইডিং) প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যেসব প্রকল্প নানা কারণে এতদিন ঝুলেছিলো সবগুলো গতি ফিরে পেয়েছে। বলা চলে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহনের পর।
উন্নয়নের মহাসড়কের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হচ্ছে জ্বালানি। আর জ্বালানি চাহিদা নিশ্চিত করতে হলে বিপিসির লোকবল সংকট সমাধান করতে হবে। এজন্য নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। নতুন অর্গানোগ্রামে জনবল ১৭৮ থেকে ৩১৫-এ উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা অনুমোদন হয়ে এলে বিপিসির কর্মক্ষমতা অনেকগুণ বাড়বে। সূত্র মতে, একটি দেশের জ্বালানির নিরাপদ মজুদ ধরা হয় ৬০ দিন। বর্তমানে আমাদের ৪৫ দিনের মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। এটাকে ৬০ দিনে উন্নীত করতে বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া প্রয়োজন।
দেশের উত্তরাঞ্চলে তেল সরবরাহের দু’টি মাধ্যম রয়েছে। সহজ মাধ্যমটি হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে দৌলতপুরে নেওয়া। সেখান থেকে রেলের ওয়াগনে করে রংপুর ডিপোতে নিতে হয়। এই পদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল এবং ঝূঁকিপুর্ণ। দৌলতপুর থেকে সড়ক ও রেলপথে রংপুরে তেল নিতে সময় লাগে সাতদিন। এর বিকল্প হিসেবে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ভারতের নুমালিগড় থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ অংশে হবে ১২৫ কিলোমিটার ও আর ভারতের অংশে হবে ৫ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের মেজর অংশই ভারত অনুদান হিসেবে প্রদান করছে।
এছাড়া ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ (ইআরএল-২) প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইআরএল’র জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৪৫ লাখে উন্নীত হবে। যদি পরিশোধিত তেল না এনে ক্রডওয়েল এনে পরিশোধন করা হয় তাহলে প্রতি লিটার ডিজেলে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ টাকা করে সাশ্রয় হয়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় তেল আনার জন্য একটি পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে। ৩০৫ কিলোমিটার এই পাইপলাইনের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এটা হবে জ্বালানি খাতের আরেকটি মাইলফলক।
জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের ঝড়ো গতির উন্নয়ন কর্মকান্ডে শুধু বিপিসির একার পক্ষে জ্বালানি তেল খাত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সে কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বিপিসি শুধু রেগুলেটরি বডি হিসেবে তাদের কাজের সহায়তা ও মূল্যায়ন করবে।