আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী খুনি দুর্নীতিবাজ পাচারকারী সুদ ও ঘুষখোরেরা এক হয়েছে
বিশ্বজিৎ দত্ত : বিএনপিসহ ‘দুর্নীতিবাজদের’ সঙ্গে নিয়ে ড. কামাল হোসেন ও এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের আয়োজনে রোববার নিউ ইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি বলেন, বড় বড় কথা তারা বলে। তারা কী পারবে উন্নয়ন করতে? তারাতো লুটে খাবে। এই লুটেরারা সব এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। কেউ সুদখোর, কেউ ঘুষখোর, কেউ মানি লন্ডারিংযের দায়ে অভিযুক্ত, কেউ বা খুনী।
উল্লেখ্য, একাদশ সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়ের মধ্যে বদরুদ্দোজা চৌধুরী নেতৃত্বাধীন ‘যুক্তফ্রন্ট’ এবং ডা. কামালের ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ গত শনিবার মহানগর নাট্যামঞ্চে নাগরিক সমাবেশ করে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসা বিএনপির নেতারাও ওই সমাবেশে যোগ দেন।
ওই সমাবেশে বদরুদ্দাজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের পাশেই বসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মওদুদ আহমেদ এবং সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।
নিউ ইয়র্কের হিলটন হোটেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অপরাধটা কী? দোষটা কী? সরকার উৎখাত করতে হবে কেন? কী কারণে? কী কাজটা করিনি দেশের জন্য? তিনি বলেন, জনগন চাইলে আবার ক্ষমতায় আসবো । না চাইলে নাই। এনিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নাই।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো তুলে ধরে যুক্তফ্রন্ট ও ‘জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া’ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুই ছেলে নাইকো, সিমেন্স আরো কত কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ খেয়েছে। সেই টাকা আবার বিদেশে পাঁচার করেছে। আমরা সেই টাকা উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছি। খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আমরা করিনি। মামলা করেছে তারই প্রিয় ত্বত্ত্বাবধায়ক সরকার। যে ফখরুদ্দীনকে বিশ্বব্যাংক থেকে ডেকে এনে খালেদা জিয়াই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর বানিয়েছিল। সেই মঈনুদ্দীন যাকে সেনাবাহিনীর প্রধান করা হয়েছিল ৭ জনকে ডিঙ্গিয়ে। তারাই মামলা করেছে। এতিমের টাকা চুরির মামলা। সেই মামলায় জেল এখন জেল খাটছেন। এতিমরা একটা টাকাও পায়নি।
এই সমস্ত দুর্নীতিবাজকে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা কথা বলেন, তারা লড়াই করবেন! কামাল হোসেন লড়াই করবেন? বি চৌধুরী লড়াই করবেন? মান্না লড়াই করবে? তিনি বক্তব্যে আরো নাম বলতে চান। কিন্তু মনে না থাকায় পাশে দাঁড়ানো একজন কে জিজ্ঞেস করেন আরো জানি কারা রয়েছে। এ বলে তিনি একটু মুচকি হাসি দেন।
পরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কামাল বদরুদ্দোজার পাশে গেছেন মইনুল হোসেন। সে আবার কাকরাইলের বাড়ি জমি দখল করে। সে জায়গা নিয়ে মামলা আছে। সাজু হোসেন ভার্সেস রাষ্ট্র। সে মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত।
আর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে এক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের ভাইয়ের নামে দখল নেওয়ার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা সবগুলো এখন এক জায়গায় হয়েছে!
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি মুহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়বেন না। কারণ, এমডির পদ ছাড়লে তো গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা মারা যাবে না। কোটি টাকার সম্পদ ড. ইউনূসের দেশে বিদেশে। এই টাকা গরীবের টাকা। তার সঙ্গে তৎকালিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সখ্যতা। তারা পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংককে প্ররোচিত করেছে। আমি বিশ্বব্যাংকে বলেছি দুর্নীতি প্রমাণ করেন। তারা তা প্রমান করতে পারেনি।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্য শেখ হাসিনা বলেন,আগামী ইলেকশনের আগে আমার তো আর আসার সুযোগ হবে না। তাই আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে যাচ্ছি।
শিগগিরই ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের সাথে যা কথা হচ্ছে, ডাইরেক্ট ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক আসতে পারব।