ঋণখেলাপি সমস্যার সমাধানসূত্র
ড. আহমদ আল কবির : ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি সারা বিশ্বেই রয়েছে। তবে আমাদের এখানে এর হার অনেকটাই বেশি। আমাদের খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে হলে এর মূলে আঘাত হানতে হবে। অন্যথায় এর কোনো প্রতিকার হবে না। জাতীয় স্বার্থেই আমাদের ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ খেলাপি ঋণ যেকোনো বিচারেই দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য ক্ষতিকর। ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য এখন আমাদের এটাই সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সাময়িক সমাধান দিয়ে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো যাবে না। তাই আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি এবং কার্যকর রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং গ্রাহক এই চারটি শ্রেণিকে একটি সমন্বিত প্রয়াসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এই কাজটি অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। এভাবে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলেই কেবল ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। এই সমন্বিত প্রয়াস কিভাবে নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ব্যাংকিং সেক্টরে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি এবং তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবো।
যে উদ্যোগটি নিতে হবে তাহলো, বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আছে ব্যাংকিং সেক্টরে তা রিভিউ করার জন্য একটি ‘জয়েন্ট রিভিউ’ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। রিভিউ কমিটি গঠিত হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের প্রতিনিধি সমন্বয়ে এবং এই কমিটি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ক্ষমতা দিতে হবে। এই তিনটি কর্তৃপক্ষ মিলে যদি রিভিউ করে তাহলে আমি মনে করি খেলাপি ঋণ সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব। গ্রাহককে এখানে সব সময়ই বিশেষ বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি কেন ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না তা জানতে হবে। এই উদ্যোগ নেওয়া হলে আমি মনে করি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ক্লায়েন্ট বা ঋণ গ্রহীতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলে একটা সমাধানের পথ চলে আসে। সব ঋণ গ্রহীতাই যে খারাপ তা নয়। কেউ কেউ আছেন যারা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। তাদের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। প্রচলিত ব্যবস্থায় আদালত গড়িয়ে সমাধানে পৌঁছানো বেশ কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এই আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা খুবই প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ঋণদানকারি ব্যাংক এবং গ্রাহক মিলে আলোচনার মাধ্যমে যদি গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধানে আসে তাহলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। এতে গ্রাহকদেরও আস্থা সৃষ্টি হবে ব্যাংকের প্রতি।
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, রুপালী ব্যাংক