নড়িয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসন দাবি
শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জেলার নড়িয়ায় পদ্মা ভাঙনরোধ প্রকল্প বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায় থেকে তদারকি করতে হবে। পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জরুরি চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলোর ঋণের আতঙ্ক দূর করতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার। সর্বোপরি পদ্মার ভাঙনে সর্বস্বান্ত মানুষদের সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি।
শরীয়তপুরের নড়িয়া প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। চোখের সামনে একের পর এক ভবন-বাড়ি-সড়ক পদ্মার পেটে চলে যাচ্ছে। কিছুতেই থামছে না পদ্মার ভাঙন। আর এতে ভিটেমাটি হারাচ্ছে শত শত মানুষ। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। এদের মধ্যে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত আড়াই মাসে নড়িয়াসহ পাঁচটি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। এমন খবরে উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত বুধবার ও শুক্রবার নড়িয়ার কেদারপুর, উত্তর কেদারপুর, শুভগ্রাম, বাঁশতলা ও নড়িয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব নড়িয়া গ্রামে ভাঙন হয়েছে। তিনটি গ্রামের ৪৫টি পরিবার তাদের বসতবাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়েছেন। ওই তিনটি গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক রয়েছে। অনেক পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। হাজার হাজার পরিবারের উপার্জনের পথও এখন বন্ধ। এলাকার বড়, মাঝারি কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সবারই এখন মাথায় হাত। যেসব জমি দেখিয়ে তারা বিভিন্ন সময় ব্যাংক ঋণ নিয়েছিলেন কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিলেন, সেগুলো এখন পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। ব্যাংকের কিস্তির টাকা পরিশোধ এখন সর্বস্ব হারানো মানুষগুলোর জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো যেখানে অর্থাভাবে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই পারছে না সেখানে ঋণের কিস্তি কীভাবে শোধ করবে।
সত্তর ও আশির দশক থেকে এ দেশে নদী ভাঙনের তীব্রতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ক্ষয়ক্ষতি। প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে আট হাজার সাতশ হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়। যার বেশিরভাগ কৃষি জমি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অলসতা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসছে এই তথ্য। ২০১৬ সাল থেকে পদ্মা নদীর ভাঙনে শরীয়তপুরে কমপক্ষে ২০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে জনপদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও চিকিৎসা কেন্দ্র এর মধ্যে গত আড়াই মাসে গৃহহীন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পরিবার। আমরা জেনেছি, পদ্মার ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কয়েক বছর আগে তিনটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্প তিনটা শেষও হয়েছে। তারপরও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। প্রকল্পের পরিচালকরা আছেন, প্রকৌশলীরা আছেন, তাদের জবাবদিহি করতে হবে। তারা কাজ করেননি। এবার প্রকল্প বাস্তবায়নে উচ্চ পর্যায় থেকে তদারকি করতে হবে। পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জরুরি চাহিদাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলোর ঋণের আতঙ্ক দূর করতে সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার। সর্বোপরি পদ্মার ভাঙনে সর্বস্বান্ত মানুষদের সমস্যা সমাধানের জন্য স্থায়ী পরিকল্পনা জরুরি।