পর্যটকদের অবাধ আগমন. যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণে ঝুঁকিতে সেন্টমার্টিন
এম আমান উল্লাহ, কক্সবাজার : স্বচ্ছ নীল জলরাশি, কেয়াবন, পাথুরে সৈকত, প্রবাল, শৈবালসহ বিস্ময়কর সব জীব-বৈচিত্রের সমাবেশ সেন্টমার্টিনে। বর্তমানে পরিবেশগত ঝুঁকিতে থাকা এ দ্বীপটি নিয়ে পরিবেশবাদীদের মাঝে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। তারা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থাই দ্বীপটির জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনবে। সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হওয়া স্বত্বেও পর্যটকদের অবাধ যাতায়াত, দ্বীপের ভারসাম্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা না রেখে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ, দ্বীপের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত কেয়াবন উজাড়, পাথর উত্তোলন করে নির্মাণ কাজে ব্যবহারসহ পরিবেশ বিধ্বংসী নানা কর্মকা-ের কারণে গত একযুগে দ্বীপের ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এমন বিপর্যস্ত অবস্থার কারণে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল সেন্টমার্টিন,কক্সবাজার ও টেকনাফ সৈকত এলাকাসহ দেশের ৬টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। সেন্টমার্টিনে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ, মাটির পরিবর্তন, জীববৈচিত্র ধ্বংস, বন্যপ্রাণী শিকার, শামুক, ঝিনুক, প্রবাল, শৈবাল, পাথর আহরণ ও সরবরাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও মানা হচ্ছে না কোনটিই। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আইন লঙ্ঘন করে তৈরি হয়েছে শতাধিক হোটেল-মোটেল।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, সেন্টমার্টিন কেবল জীববৈচিত্রে ভরপুর একটি দ্বীপ নয়, এটি দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। তাই দ্বীপটি রক্ষায় সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। দ্বীপের ভার বহনের ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবোর্চ্চ কতটি হোটেল-মোটেল, কটেজ বা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে, কোথায় কোথায় স্থাপনা নির্মাণ করলে দ্বীপটির ইকোলজির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, প্রতিদিন কি পরিমাণ পর্যটক দ্বীপে আসতে পারবে, কিভাবে পর্যটন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, দ্বীপটির জীববৈচিত্র কিভাবে রক্ষা করা যাবে, এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা কেমন হতে হবে তা এ নীতিমালায় সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থার কারণে বর্তমানে দ্বীপে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। কেয়াবন ধ্বংস ও পাথর উত্তোলনের কারণে দ্বীপে ভাঙন বেড়েছে। এমনকি এই প্রথমবারের মতো দ্বীপের উত্তর অংশে ৫০টি নলকূপ ও কুয়ার পানিতে লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। দ্বীপে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গেছে যা দ্বীপটির জন্য অশনি সংকেত। অবিলম্বে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করে দ্বীপ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্বেগ না নিলে এবং পর্যটকদের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে না আনা হলে সেন্টমার্টিন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেন সাইফুল।
পরিবেশবিদ বিশ্বজিত সেন বাঞ্চু বলেন, প্রতিটি দ্বীপের ভার বহনের নিদিষ্ট ধারণক্ষমতা থাকে। বর্তমানে এ দ্বীপের জনসংখ্যাই হয়ে গেছে প্রায় ৮ হাজার। এছাড়া পর্যটন মৌসুমে এই দ্বীপে প্রতিদিন আগমন ঘটে প্রায় ১০-১৫ হাজার পর্যটক যা ভার বহনের ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, প্রভাবশালীরা দ্বীপের পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে দ্বীপে শতাধিক পাকা স্থাপনা নির্মাণ হয়ে হয়ে গেছে। কিছু কিছু হোটেল-মোটেলে পর্যটকেরা যাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখতে পারে, এ জন্য দ্বীপের রক্ষা কবচ খ্যাত কেয়াবন কেটে ফেলা হচ্ছে। সম্পাদনা : মুরাদ হাসান