ঋণ পরিশোধেই কি নিকির পদত্যাগ!
সান্দ্রা নন্দিনী : জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হ্যালির আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কোনরকম পূর্বাভাস না দিয়েই কেন হ্যালি এই সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন সেটি নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার হঠাৎ করেই নিজের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানান হ্যালি। এবছরের শেষেই পদ ছাড়ছেন তিনি। একটি বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও কেন হ্যালি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন তার পেছনে সম্ভাব্য ৩টি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
১) বোল্টন-পম্পেওর বিরাগভাজন হওয়া : মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কঠোর বিদেশনীতি কারও অজানা নয়। অন্যদিকে, হ্যালি নিজেও জাতিসংঘ ও ট্রাম্প প্রশাসনে দৃঢ়চেতা হিসেবে অত্যন্ত সুপরিচিত। তবে, ট্রাম্পের প্রথম একবছর নির্বিঘেœ কাটালেও, পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নানা সিদ্ধান্তের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন হ্যালি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য, গত এপ্রিলে একটি টেলিভিশন শো’তে এসে হ্যালি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নতুন অবরোধ আরোপ করবে। তবে, পরবর্তীতে ট্রাম্প জানান, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত আপাতত তার নেই। সেসময়, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, হ্যালি দ্বিধান্বিত হয়ে এমন মন্তব্য করেছেন। এই প্রেক্ষিতে, নিকি হ্যালি তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন, তিনি মোটেও দ্বিধান্বিত ছিলেন না। অর্থাৎ, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন দুই সংযোজন বোল্টন ও পম্পেওর সঙ্গে বড় কোনও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার আগেই নিজ থেকেই হয়ত সরে গেছেন হ্যালি।
২) অর্থোপার্জনের কারণে হতে পারে : হ্যালি অনেকটা সময় নির্বাচিত গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১০ সাল থেকে ছয়বছর তিনি প্রাদেশিক ক্ষমতায় ছিলেন। এটি আর্থিক হিসেবে খুব একটা লাভজনক ছিলো না। হ্যালি ও তার স্বামীর ২০১৫ সালের বার্ষিক সম্পদের হিসাবে তাদের সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ ছিলো, মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে এই পরিমাণ ছিলো, ১ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ২০১৩ সালে এটি ছিলো, ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
পাশাপাশি, হ্যালির ২০১৮ সালের আয় বিবরণীর হিসেবে দেখা যায়, সেখানে তার বকেয়া ঋণের পরিমাণ ক্রেডিট কার্ডে ২৫ থেকে ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার, বন্ধকী ঋণ রয়েছে প্রায় ১০লাখ ডলার এবং অন্যান্য ঋণ প্রায় আড়াই থেকে ৫লাখ ডলারের মধ্যে।
অন্যদিকে হ্যালির দুই সন্তানের একজন কলেজে পড়ে এবং অন্যজনও কয়েকবছরের মধ্যেই কলেজে উঠবে। এ কারণেও তার এই সিদ্ধান্ত হতে পারে কেননা হ্যালির কর্ম অভিজ্ঞতা তাকে সহজেই বেরসারি খাতে মিলিয়ন ডলারের চাকরি পেতে সহায়তা করবে।
৩) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনায় : ওই দু’টি ছাড়া আরেকটি বিষয়কে তার পদত্যাগের পেছনের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, তিনি হয়ত আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে চান। যদিও এই সম্ভাবনা মঙ্গলবারই হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন হ্যালি। তিনি বলেন, নির্বাচনে দাঁড়ানো নয়, বরং ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় কাজ করতে চান। তবে, বিশ্লেষকদের ধারণা, ২০২০ সালে না হলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হতেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন হ্যালি। সিএনএন