হাসিনা-মোদি সরকারের চলতি মেয়াদে তিস্তা চুক্তির প্রতিশ্রুতির কি হবে?
তরিকুল ইসলাম : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরের সময় উভয় দেশের সরকারের চলতি মেয়াদেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদ আছে মাত্র কয়েক মাস। অন্যদিকে মোদি সরকারের মেয়াদ আছে প্রায় পাঁচ মাস। তবুও এই চুক্তি কার্যকরে কোনো উদ্যোগ নেই দিল্লির পক্ষ থেকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শেষ পর্যন্ত হাসিনা-মোদির চলতি মেয়াদে চুক্তি সই হবে কি?
উল্লেখ্য, দু’মাস বাদেই বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচন। তাই এই সময়ে তিস্তা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের সম্ভাবনা একদম ক্ষীণ বলে মনে করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দিল্লিকে বিষয়টি বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হলেও ভারতের স্বদিচ্ছার অভাবে এ নিয়ে এখনো অগ্রগতি নেই। ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করেন। সেই সময় নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে শেখ হাসিনা ২০১১ সালের জানুয়ারিতে উভয় দেশের সম্মতি অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি অন্তবর্তীকালীন চুক্তি’র অনুরোধ করেন। জবাবে মোদি বলেন, এ ব্যাপারে তার সরকার ভারতে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতে মোদি ঘোষণা দেন বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান সরকারের মেয়াদেই তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি হবে।
হাসিনা-মোদি বৈঠকে সে সময় ফেনী, মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর মতো অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশও দেন। এদিকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হলেও চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেতে যাচ্ছে ভারত। অথচ এর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টনে অপারগতা প্রকাশ করায় সে সময় ভারতকে বন্দর দু’টি ব্যবহারের সম্মতিপত্র সই থেকে বিরত ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এই চুক্তিটি যদি সুরহা না হয় তবে নির্বাচন পরবর্তী উভয় দেশের সরকার তিস্তা নিয়ে কতটা আন্তরিক হবে তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে আলাপ কালে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, মোদি চুক্তির বিষয়টি বলেছেন ঠিকই কিন্তু কাজের কাজতো কিছুই হচ্ছেনা। চুক্তি করার জন্য যে ঘটনা প্রবাহ তৈরি হওয়ার দরকার তেমন কিছুইতো দেখছিনা। মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তিস্তা চুক্তি না হলেও এবার চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সে সুযোগ পেতে যাচ্ছে ভারত। আমরা যে উদারতা দেখাচ্ছি, ভারত তা দেখাচ্ছেনা।
‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি। গত কয়েক বছরে অনেক কিছু অর্জিত হয়েছে কিন্তু আরো অনেক বেশি কিছু অর্জন বাকি রয়ে গেছে। ভারত অনেক কিছু করার ঘোষণা দিলেও অল্পই বাস্তবায়ন করেছে। ভারত যদি দাবি করে যে আমরা বন্ধু তাহলে আমরা সমান ও অকপট আচরণ চাই। আমাদের সমৃদ্ধি ভারতেরও সমৃদ্ধির কারণ হবে। প্রতিশ্রুতি থাকার পরও ভারতের মোট আমদানির মাত্র ১ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে যায়। যেখানে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কারও ভারতের সাথে বেশি বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান