এগিয়ে চলেছে গোল্ডেন রাইসের জাত উদ্ভাবনের কাজ
মতিনুজ্জামান মিটু : বাংলাদেশে বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইসের জাত উদ্ভাবনের কাজ এগিয়ে চলেছে। খাদ্যের মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি পূরণের এক সম্ভানাময় নতুন কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে এ গবেষণা চলছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) এর হেলদিয়ার রাইস প্রকল্পের আওতায় চলছে এ গবেষণার কাজ। ব্রি মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর ‘প্রশ্নোত্তরে গোল্ডেন রাইস’ নামের এক পুস্তিকার মাধ্যমে জানান, ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ শিশু এবং গর্ভবতী নারী এতে আক্রান্ত। গোল্ডেন রাইস নতুন এক ধরণের ধান। এ ধানে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা মানবদেহের প্রয়োজন অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়।
হেলদিয়ার রাইস প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আবদুল কাদের জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বের প্রায় ১৯ কোটি শিশু এবং ১ কোটি ৯০ লাখ গর্ভবতী নারী ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি জনিত অপুষ্টিতে ভুগছে। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি শিশু অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। এতে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিশু অন্ধত্ব বরণ করে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ভূট্টা ও মাটিতে বসবাসকারী এক সাধারণ খাদ্যোপযোগী অনুজীবের জিন ধানে সংযোজন করে গোল্ডেন রাইস উদ্ভাবন করা হয়েছে। স্বাদহীন যৌগ বিটা ক্যারোটিন(উদ্ভিদে বিদ্যমান এক ধরনের উপাদান)সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস ধানের চাল সোনালি-হলুদ বর্ণের। বিটা ক্যারোটিন হলুদ বর্ণের এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ। এ জন্য অন্য বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ভূট্টা প্রভৃতির মতো এই চালও হলুদ বর্ণের হয়। এ জাতের চালের স্বাদ, অন্যান্য উচ্চফলনশীল ধানের চালের ভাত থেকে আলাদা হবেনা। বিটা ক্যারোটিন মানবদেহে এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিন মলমূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায় কিংবা শরীরের চর্বিতে জমা থাকে, যার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে গোল্ডেন রাইসের নিরাপদ খাদ্যমান নিশ্চিতকরণের গবেষণা এগিয়ে চলেছে। এ পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। গোল্ডেন রাইসের নিরাপদ খাদ্যমান সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বাংলাদেশ সরকারের জীবনিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কাছে যথাসময়ে উপস্থাপন করা হবে। তারা এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাইপূর্বক সন্তুষ্টি সাপেক্ষেই কেবল কৃষক ও ভোক্তার কাছে গোল্ডেন রাইসের প্রাপ্যতা অনুমোদন করবেন।
গোল্ডেন রাইসের স্থানীয় উফশী জাত উদ্ভাবনে বিটা ক্যারোটিনের মাত্রা এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে মাথাপ্রতি চাল ব্যবহারে গড় মাত্রা অনুযায়ী এর ভাত খেলে দৈনিক ভিটামিন ‘এ’ চাহিদার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ পূরণে সহায়ক হয়। গোল্ডেন রাইসের ধানের বীজের দাম অন্যান্য উফশী ধানের বীজের মতোই হবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা রোগ-বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ধানের ফলনশীলতা অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ধানের জাতের গোল্ডেন রাইস সংস্করণ উদ্ভাবনে কাজ করছেন। স্বপরাগায়িত বা ইনব্রিড জাত হওয়ায় গোল্ডেন রাইসের বীজ কৃষক নিজেই উৎপাদন করতে পারবেন এবং পরবর্তী ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারবেন। বারবার কারো কাছে কিনতে হবেনা। ব্রি’র পরিচালক(প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী জানান, বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস সংস্করণ উদ্ভাবনের কাজ গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। সম্পাদনা : মোহাম্মদ রকিব হোসেন