শারদীয়া নবরাত্রি- দুর্গোৎসব
ইঞ্জিনিয়ার প্রাঞ্জল আচার্য্য
‘সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে
শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে ।’
আজ মহা সপ্তমীর দিনে মহামায়া দুর্গা দেবী কালরাত্রি রূপে অর্থাৎ দেবতেজ আকার ধারণ করেন। এই রূপে দেবী সর্বদা শুভ ফল প্রদান করেন। তিনি অষ্টমীতে অলংকৃতা হন এবং নবমীতে মহিষাসুর বধ করেন। শারদীয় এই উৎসবটি সারা পৃথিবীর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে নবরাত্রি উৎসব হিসেবেও পালিত হয়। রাবণ বধ ও সীতাদেবীকে উদ্ধারের নিমিত্তে শ্রীরামচন্দ্র দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গার অকালবোধন করে নবরাত্র ব্রত পালন করেছিলেন।
আশ্বিন মাসে অকালে অসময়ে দেবীকে জাগ্রত করার জন্য অকাল বোধন করতে হয়েছিল। দুর্গাপূজার বিধান অনুসারে তিনবার বোধনের নিয়ম আছে- শুক্লা ষষ্ঠী, কৃষ্ণা চতুর্দশী এবং কৃষ্ণা নবমীতে। সকল দেবতাদের তেজ থেকে উৎপন্ন দুর্গাদেবী মহিষাসুর বধের নিমিত্ত আশ্বিনের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে আবির্ভূত হন।
আমাদের এই জড় জগৎ অর্থাৎ পৃথিবীকে পরিচালনা করার দায়িত্ব যার, যিনি পরমেশ্বর ভগবানেরই বহিরঙ্গ শক্তি, যাকে আমরা মহামায়া জগজ্জননী রূপে জানি তিনিই সেই শক্তি অর্থাৎ মহামায়া দুর্গাদেবী। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের প্রকৃতি খ-ে (২/৬৬/৭-১০) তে আছে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সমস্ত শক্তি যার থেকে প্রকাশিত হয়, যিনি অশুভ নাশ করেন ও আসুরিক শক্তি বিনাশ করেন, তিনিই জগজ্জননী মা দুর্গা । দেবী মাহাত্ম্য (১/৭৫) ব্রহ্মার স্তুতির মাধ্যমে এই দৈব শক্তির স্বরূপ প্রকাশ করেছেন-
‘ত্বয়ৈতৎ ধার্যতে বিশ্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ।
ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা।।’
অর্থাৎ হে দেবী, আপনিই এই জগৎ ধারণ করে রয়েছেন। আপনিই এই জগৎ সৃষ্টি করেন, আপনিই একে পালন করেন এবং সর্বদা প্রলয়কালে আপনিই একে সংহার করেন।
শারদীয়া দুর্গাপূজা মাতৃপূজা। এই পূজার প্রচলন শ্রীরামচন্দ্র শুরু করেন ত্রেতাযুগে। দ্বাপরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে অর্জুন মহাশয় দুর্গাদেবীর প্রণাম, স্তুতি ও পূজা করছিলেন। আর কলিযুগে চৈতন্য মহাপ্রভূ নবদ্বীপে মুকুন্দসঞ্জয় পূণ্যবন্তের বাড়িতে যেখানে টোল খুলেছিলেন তা ছিল চ-ীম-প। সেখানে বহু বৎসর যাবৎ দুর্গাপূজা হয়ে আসছিল। বৈষ্ণাবাচার্য নিত্যানন্দ খড়দহে স্বগৃহে প্রতিমায় দুর্গাপূজা করতেন। পরবর্তীতে স¤্রাট আকবরের রাজত্বকালে ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে মনুসংহিতার টীকাকার কুল-কুভট্টের পুত্র রাজা কংস নারায়ণ প্রায় নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে দেবীপ্রতিমায় দুর্গাপূজার প্রচলন করেন।
লেখক : ভক্তিশাস্ত্রী, মায়াপুর ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন, ইসকন (ঢাকা)।