প্রথম বাড়ির অভিযানে নিহত ২ মাধবদীতে দুই জঙ্গী আস্তানায় অপারেশন গর্ডিয়ান নট
খন্দকার শাহিন, মাধবদী (নরসিংদী) : নরসিংদীর মাধবদী ও শেখেরচরে ঘিরে রাখা দুটি বাড়ির মধ্যে একটিতে অভিযান শেষ করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন নারী। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০, নাম-পরিচয় জানা যায়নি, বিস্ফোরণের ফলে তাদের চেহারাও বোঝা যায়নি। মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযানে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।
দুপুর পৌনে ১টায় পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী অভিযান সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গী আস্তানায় চলমান অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘এড়ৎফরধহ শহড়ঃ ’ (গর্ডিয়ান নট)। তিনি বলেন, সোয়াত টিম ও জঙ্গীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সম্পূর্ণ আইনী প্রটোকল মেনেই এ অভিযান সম্পন্ন করা হবে।’’
সোয়াত সদস্যরা অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নেয়ার পর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে শেখেরচর ভগিরথপুরে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানার দিক থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ আসে। দুপুরে দেড়টা পর্যন্ত কয়েক দফা গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। পুলিশ সকালেই বাড়ি দুটির আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়, ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। মাইকিং করে কাউকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এর আগেই পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও র্যাব সদস্যরা দুটি এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থলে রয়েছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন। মাধবদীর গাংপার ও ভগিরথপুরে উপস্থিত রয়েছে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি, এম্বুলেন্স ও চিকিৎসক দল।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম সকাল ১০ টায় নরসিংদীতে পৌঁছে ভগিরথপুরে এ অভিযান শুরু করেন। এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একাধিক জঙ্গি আছে, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদের কাছে কী ধরনের অস্ত্র বা বিস্ফোরক থাকতে পারে সে বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। আশপাশের লোকজনের যাতে ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। অভিযান শুরুর আগে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে তারা আত্মসমর্পণ করে।’
নরসিংদীর পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন জানান, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও পুলিশ সদরদপ্তরের ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেলের (এলআইসি) সদস্যরা সোমবার রাত ৯টার দিকে ওই বাড়ি দুটি ঘিরে ফেলেন। পরে র্যাব তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। মঙ্গলবার ভোরে সোয়াট সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
শেখেরচরের ভগিরথপুরের পাঁচ তলা বাড়িটির মালিক বিল্লাল হোসেন নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী। আর মাধবদী পৌরসভার ছোট গদাইরচরের সাত তলা নিলুফা ভিলার মালিক হাজী মো. আফজাল হোসেন।
ভগিরথপুরের বাড়িটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে তিনশ মিটারের মধ্যে। সেখান থেকে মোটামুটি দুই কিলোমিটার দূরত্বে মাধবদীর ছোট গদাইরচ (গাংপার) এর বাড়িটি। দুটি বাসাই এ মাসের ৭ তারিখে ভাড়া নেয়া হয়েছে বলে বাড়ির মালিকরা পুলিশকে জানিয়েছে।
অভিযানের আগে, আশপাশের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পর সকালে দুই বাড়ির গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এনে রাখা হয় দুই বাড়ির কাছাকাছি।
সকালে বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আবদল্লাহ আল মামুন এবং নরসিংদীর সিভিল সার্জন ভগিরথপুরে আসেন। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব