সঞ্চয়পত্র থেকে ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার
রমজান আলী : বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্রে থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট দুই লাখ ৪৬ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আগস্টে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ নিয়েছে চার হাজার ২১ কোটি টাকা। এর আগে জুলাইতে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নিট ঋণ নেয় ৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এর আগের অর্থবছরে ২০১৬-১৭ বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ছয় হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। একমাস আগে জুলাইতে বিক্রি হয় ৮ হাজার ২২৯ কোটি ৬১ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র।
সূত্র জানায়, মূলত দু’টি কারণে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন। প্রথমত, গ্রাহকদের কাছে অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেকোনও আমানতের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৭১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সুদ পরিশোধে গেছে এক হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মূল ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার নিম্নমুখী ও ব্যাংকের প্রতি এখন মানুষের আস্থা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এ কারণে কয়েক বছর ধরে নিরাপদ বিনিয়োগের আশায় সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সঞ্চয়ীরা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর থেকে ব্যাংক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটছে। এ কারণে ব্যাংকের প্রতি এখন মানুষের আস্থা কমে গেছে। এছাড়া বর্তমানে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে কম সুদে ব্যাংকগুলো আমানত নিচ্ছে। এ কারণেও সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন সবাই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল ৯ হাজার ২৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি বেশি হয়েছে ২৯ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী/রেজাউল আহসান।