আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
২ দশকে জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে ৫৫ লাখ টন
শাহীন চৌধুরী : দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কমমূল্যে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। গত দুই দশকে, বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন থেকে ৭৫ লাখ টনে বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্রমতে, যোগাযোগ পরিবহন, সেচ পাম্প এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি খরচের কারণে জ্বালানি তেল আমদানি ব্যাপক ভাবে বাড়ছে। পরিবহন খাত সর্বদাই জ্বালানি তেলের প্রধান ব্যবহারকারী রয়ে গেছে। অর্ধেক তরল জ্বালানী শুধুমাত্র পরিবহন খাতে ব্যবহার করা হয়। গত দুই দশকে বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। সৌর বিদ্যুৎ ও বিদ্যুতের ব্যবহার সেচের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে সামগ্রিক চাহিদাতে এটি ৩০% অবদান রাখছে। এক দশক আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তরল জ্বালানির চাহিদা ১% কম ছিল। ২০১৭-১৮ সালে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা। যার মধ্যে ২৪% বিদ্যুৎ তরল জ্বালানি থেকে তৈরি হয়, ডিজেল থেকে ৭% এবং চুল্লি তেল থেকে ১৭%। নতুন তরল জ্বালানি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এখনও চলছে। ফলস্বরূপ পরবর্তী কয়েক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তরল জ্বালানির চাহিদা বাড়তেই থাকবে।
পেট্রোলিয়াম পণ্য ও বিপণন আমদানি করার জন্য ১৯৭৭ সালে বিপিসি তৈরির পর, ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ব বাজারে কাঁচা তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় সংস্থাটি লাভ করে। বাকি সময় জুড়ে বিপিসি পরিচালিত জ্বালানি মূল্যের কারণে ক্ষতি ভোগ করতে হয়েছে। গত বছর থেকে বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপিসিকে আবারো ক্ষতির হিসাব করতে হচ্ছে।
বিপিসির একটি সূত্র দাবি করেছে, আমদানি, কর ও মার্জিনে মোট ব্যয়ে ডিজেল, কেরোসিন এবং চুল্লি তেল সরবরাহের জন্য প্রতিদিন ২৪ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিপিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান আকরাম আল হোসেন জানান, বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরের বিসিসি ৮ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত স্থানীয় সরবরাহের হিসাবে পেট্রোল আমদানি করার কোন প্রয়োজন নেই। বিপিসি এখনও এই দুটি পণ্য থেকে লাভ করছে। কিন্তু আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য চাহিদা বৃদ্ধির বিবেচনায় বিপিসি ১৫ হাজার টন পেট্রোল আমদানি করতে যাচ্ছে। বর্তমানে পেট্রোল ৫ লাখ টন অক্টেন-এর ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টন চাহিদা রয়েছে। বেসরকারি খাত ২ লাখ টন চুল্লি তেল আমদানি করে। প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়।
২০১৬-১৭ সালে অপরিশোধিত তেল এবং অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য মোট আমদানি ৫.৫ মিলিয়ন টন ছিল। বিপিসি আর্থিক বছরে আমদানিকৃত বেসরকারি খাতের পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলোর প্রকৃত পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি। কিন্তু গত বছরে প্রায় ২ কোটি টন পেট্রোলিয়াম পণ্য বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয়েছিল। এর ফলে ২০১৬-১৭ সালে জনসাধারণ ও বেসরকারি খাতে মোট আমদানি ছিল ৭.৫ মিলিয়ন টন। বেসরকারি খাতকে অনুমোদন, পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির জন্য বিপিসি থেকে আইপিপি লাইসেন্স প্রাপ্ত করার পরামর্শ দিয়ে বিপিসি একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। বেসরকারি খাতের আমদানিতে বিপিসি নজর রাখতে পারে। তবে বেসরকারি খাতের জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ বিপিসি থেকে কম। বিপিসি’র অকার্যকারিতাই এর কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে বলেন যে বিপিসি’র অযোগ্যতা উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণ। তিনি যথাযথ পর্যায়ে অকার্যকারণ সনাক্তকরণ এবং তারপরে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করার পরামর্শ দেন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মাস্টার প্ল্যানের নির্ধারিত জ্বালানি মিশ্রণের আওতায় আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। যেমন তরল জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য ইঙ্গিত করে ২০১২ সালে মাথাপিছু জ্বালানি ব্যবহার ১৭০ কেজি ছিল। এখন এটি ৩০০ কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশটির অবস্থা অর্জন করার জন্য এটি ৬৮৭ কেজিতে বৃদ্ধি পাবে। তার মানে ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের দ্বিগুণ জ্বালানি তেল ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর উন্নত দেশে পরিণত হলে উন্নয়নের জন্য এটি ১,২৮১ কেজি এবং ১,৮৯৩ কেজিতে বৃদ্ধি করতে হবে। সম্পাদনা : ইকবাল খান