‘ইয়ে ‘মিটু’ ক্যায়া হ্যায়?’
ইমরুল শাহেদ : ঠিক এ কথাটিই জানতে চাইলেন ভারতের সাবেক সাংবাদিক-রাজনীতিবিদ এমজে আকবরের বাসভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা। #মি টু সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তাইতো তাদের মনে এমন প্রশ্ন। এমজে আকবর ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করলেও এখনো থাকেন সরকারি বাসভবনে। মি টু আন্দোলনের ঝাপটায় মন্ত্রীত্ব হারানো আকবর তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা প্রথম নারী প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন। তখন থেকেই সাংবাদিকরা আকবরকে অনুসরণ করতে শুরু করেন।
বৃহস্পতিবার দিল্লির পাতিয়ালা আদালতে মামলা দায়েরের সময় অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সমর বিশালের এজলাস ঠাসা ছিল সাংবাদিকে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে যখন আকবরের নাম ডাকা হয় তখন তাকে আদালতে দেখা যাননি। স্বভাবতই সাংবাদিকরা ভিড় করতে থাকেন তার সরকারি বাসভবনে। সাংবাদিকদের ভিড় দেখে ভড়কে যাওয়া নিরাপত্তাকর্মীরা জানতে চান ‘ইয়ে ‘মি টু’ ক্যায়া হ্যায়?’
উল্লেখ করার বিষয় হলো, আকবর ছাড়াই প্রায় ১২ জন আইনজীবী ঢুকেন এজলাসে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন গীতা লুথরা। তিনি যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত আর এক সাংবাদিক তরুণ তেজপালের উকিল ছিলেন। গীতার সঙ্গে ছিলেন কৌঁসুলি সন্দীপ কুমার। অথচ আকবরের ওকালতনামায় ৯৭ জন উকিলের নাম রয়েছে। সব মিলিয়ে আকবরের আইনজীবীর সংখ্যা এখন শতাধিক ছাড়িয়েছে।
আকবরের বিরুদ্ধে যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে তখন কংগ্রেসের যুব মোর্চা তার পদত্যাগের দাবিতে দিল্লির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পরে বিক্ষোভকারী যুব কংগ্রেস কর্মীদের গ্রেপ্তারও করা হয়। আকবর-প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নীরবতা নিয়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘যৌন হেনস্থার’ অভিযোগে আকবরকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হোক, এমনটা চাইছে বিজেপি-র একাংশও। মানেকা গান্ধী, স্মৃতি ইরানি এর আগে ‘#মি টু’ ক্যাম্পেনকে সমর্থন জানিয়েছেন। মানেকা বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অবসর পাওয়া বিচারপতিদের নিয়ে ৪ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছেন।
পক্ষান্তরে, প্রিয়ার হয়ে মামলা লড়ার জন্য আইনজীবীর খরচ যোগাতে একজোট হচ্ছেন আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ। তারা টুইটে সেকথা খোলাখুলিই জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, বিদেশের মতোই এ দেশেও যৌথ তহবিল গড়ে হেনস্থাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাতে হবে। ইন্ডিয়ান এডিটর্স গিল্ডও প্রিয়া রামানির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আকবর যেভাবে বিষয়টিতে ‘রাজনীাতির রং’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তারও কড়া নিন্দা করা হয়েছে। বস্তুত, তৃণমূলের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র এদিন ফেসবুকে সরাসরিই লিখেছেনÑরাফাল, নোটবন্দি, গণপিটুনির মতো বিভিন্ন বিষয় থাকতে বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে ভোট লড়তে চাইছে, আকবরের এই বক্তব্য হাস্যকর। মহুয়ার প্রশ্ন, ‘আপনি কি সিরিয়াস এম জে আকবর?’ সম্পাদনা : রেজাউল আহসান