৪ হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ থমকে গেছে
আবু বকর : আসন্ন নির্বাচনের কারণে আমদানির নামে চার হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ থেমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থপাচারের অনিয়ম বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে খুঁজে বের করে। এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নথি পাঠানো হয়। তারা পুনরায় অনুসন্ধান করার পর এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু সামনে নির্বাচন চলে আসায় পুরো বিষয়টি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত পণ্য না আসায় বা ঘোষিত পণ্যের বদলে ভিন্ন পণ্য আসায় ব্যাংকের টাকা অনাদায়ী থাকছে। ব্যাংক বাধ্য হয়ে ফোর্সলোন (বাধ্যতামূলক ঋণ) তৈরি করে এলসির দেনা শোধ করছে। এছাড়া এলসির বিপরীতে ভুয়া বিল অফ এন্ট্রি ব্যাংকে জমা দিয়ে পণ্য দেশে আনার প্রমাণ দেখাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বাস্তবে পণ্য দেশে আসছে না। আবার অনেকেই বিল অফ এন্ট্রি জমাই দিচ্ছে না। এভাবেও দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের তদন্তে এসব ঘটনা বেরিয়ে আসে। গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে আমদানির নামে দেশ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বিদেশে পাচারের ঘটনা ধরা পড়ে। এসব ক্ষেত্রে এলসির বিপরীতে পণ্য দেশে না এনে, এক পণ্যের ঘোষণা দিয়ে অন্য পণ্য এনে এবং পণ্য না এনে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মুদ্রা পাচার করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন তদন্তে সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, স্ট্যান্ডাড চাটার্ড ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে খোলা এলসির ক্ষেত্রে জটিলতা পায়।
এর সঙ্গে বেক্সিমকো ফ্যাশন, ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, এগ্রি ইকোনমি বাংলাদেশ, গ্রাডেনিয়া কর্পোরেশন, ইন্ট্রামেক্স টেক্সটাইল, এগ্রো বিডি, এবি কর্পোরেশন, আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম, এসআর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ইয়াছির এন্টারপ্রাইজ ও সেবা এন্টারপ্রাইজ জড়িত বলে তথ্য পাওয়া যায়। এসব প্রতিষ্ঠান যাতে কোনো ব্যাংকে নতুন করে এলসি খুলতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয়, অনিষ্পন্ন এলসির পণ্য দেশে আনা বা বৈদেশিক মুদ্রা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে। একটি সরকারি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক এলসির নিষ্পত্তির বিষয়ে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার লাইসেন্স স্থগিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেসব ঘটনা ধরা পড়ছে, তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। মানি লন্ডারিং হলে সেগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হচ্ছে। যেসব কোম্পানি এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের নতুন করে এলসি খোলার অনুমোদন বন্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বন্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই এখন ঋণখেলাপি। এ কারণেও অনেক প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলা বন্ধ রয়েছে। সম্পাদনা : শাহীন চৌধুরী, ইকবাল খান