রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়ায় আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা
সোহেল রহমান : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) খেলাপি ঋণ (নন-পারফর্মিং লোন) বেড়ে যাওয়ায় দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ একদিকে যেমন অনেক বেড়েছে, অন্যদিকে সম্পদ ও মূলধনের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর আয় বর্তমানে ঋণাত্মক অবস্থানে দাঁড়িয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত জুন শেষে সার্বিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে এই হার যথাক্রমে প্রায় ২৮ শতাংশ ও ২২ শতাংশের বেশি। অবশ্য গত বছরের (২০১৭) তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার সামান্য কমেছে। গত বছর এই হার ছিল যথাক্রমে ২৯ শতাংশ ও ২৪ শতাংশ।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০১৫ সাল থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার বাড়ছে। গত ২০১৫ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ২১ শতাংশ ও প্রায় ২৩ শতাংশ। পরের বছর এটি বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে প্রায় ২৪ শতাংশ ও প্রায় ২৫ শতাংশ। গত চার বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে এই হার ছিল সবচেয়ে বেশি। আলোচ্য বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ছিল যথাক্রমে ২৯ শতাংশ ও ২৪ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে সম্পদ ও মূলধনের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আয় বর্তমানে ঋণাত্মক। গত জুন শেষে সম্পদের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আয়ের ঋণাত্মক (-) হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে প্রায় দশমিক ৬ শতাংশ এবং প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে মূলধনের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আয়ের ঋণাত্মক (-) হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে প্রায় ১২ শতাংশ এবং প্রায় ৮ শতাংশ।
এদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ‘মুদী’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘ব্যাংকিং সিস্টেম আউটলুক : বাংলাদেশি ব্যাংকস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো হলেও ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নাজুক। সুশাসনের দুর্বলতার কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ কারণে সুদের হার বাড়তে পারে এবং ব্যাংকিং খাতে মুনাফার হার কমে যেতে পারে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে কাজের পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও সম্পদের গুণগত মান, মূলধন ও মুনাফা নিম্নমুখী। তবে ব্যাংকিং খাতে প্রচুর তারল্য রয়েছে এবং এ খাতে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। সম্পাদনা : ইকবাল খান