প্রথম পাতা • মিনি কলাম • লিড ৫
পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত ২৬ মার্চ থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতার সংবাদপত্র
প্রিয়াংকা আচার্য্য : ১৯৭১ সালে পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় কাজ করতেন সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত। জন্ম খুলনায়। দেশভাগের পর পাড়ি জমান পশ্চিমবঙ্গে। জীবন বাজি রেখে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ওপর চলা পশ্চিম পাকিস্তানীদের নিপীড়নের তথ্য তুলে ধরেছিলেন রণাঙ্গনে গিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ স্মৃতিচারণামূলক গ্রন্থ ‘ভাঙ্গা পথের রাঙ্গা ধুলায়’। বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করেছেন ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’। কলকাতার একটি হাসপাতালে ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ৮৫ বছর বয়সে এই প্রবীণ সাংবাদিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সাক্ষাৎকারটি ২০১৬ সালের ১০ জুন কলকাতায় তার বাসাতে বসে নেয়া। ২৬ মার্চ থেকে কলকাতার সংবাদপত্রগুলো উত্তাল হয়ে উঠলো পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য। যশোর ও খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে জড়ো হতে লাগলো। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিকরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যশোরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে যতোদূর সম্ভব পূর্ব পাকিস্তানের ভেতরে গিয়ে তথ্য নিয়ে আসতে লাগলো। কারণ তখনও যশোর এবং খুলনা এলাকা পাক হানাদার মুক্ত ছিল। ভারতের সীমন্তরক্ষীরা আমাদের সেসময় সাবধান করে দিতো যেন আমরা যেখানেই থাকি না কেন ভারতে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই প্রবেশ করি। নিয়মিতভাবেই আমার লেখা বের হতো যুগান্তরে। কখনও কখনও সেই লেখা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে অমৃতবাজারেও প্রকাশ হতে লাগলো। এছাড়া স্পট লাইট বলে তখন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ইংরেজি ভাষায় একটা প্রেস্টিজিয়াস অনুষ্ঠান হতো। ১৯৬৯ সালে আমিই সেখানে প্রথমবার সীমান্ত গান্ধীর ওপর বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান করি। ৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ১৫ এপ্রিল আমি একটা বিশেষ অনুষ্ঠান করি। সকল মহলে অনুষ্ঠানটি বেশ আলোড়ন ফেলেছিল। একটি স্মরণীয় মুহূর্তের কথা বলি, একদিন আমি যশোর থেকে সীমান্তে এসে দেখি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ ও সংগ্রামী নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ ও তার স্ত্রী প্রভাবতী দেবীকে দাঁড়িয়ে আছেন। জওহরলাল নেহেরুর পর অবিভক্ত ভারতবর্ষে ও পরবর্তীকালে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছিল লক্ষণীয়। তিনি যেকোনো তথ্য পাওয়ার পর তার গুরুত্ব বুঝে নিজে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পর্যবেক্ষণ করতেন। পূর্ব বাংলার চরম সময়ে তাই তিনি বয়সকে তোয়াক্কা না করে যশোরের সীমান্ত এলাকায় গিয়ে স্বস্ত্রীক ঘটনার চাক্ষুষ করেতে এসেছিলেন। এটা আমার পরম সৌভাগ্য যে, তার সাথে সীমান্তে আমার দেখা হয়েছিল। তার সান্নিধ্যে তখন অনেক কিছু তখন আমার বোধগম্য হয়। আমার নিজে তাকে দেখে আমি এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করি। উনি আমাকে চিনতেন ১৯৬৩ সাল থেকে। সীমান্তে দেখে বেশ খুশি হলেন। এরপর একটা বাঁশের মাচার উপর আমাকে বসিয়ে আমার সংগ্রহ করা সকল তথ্য খুটিয়ে খুটিয়ে জেনে নিলেন। আমার লেখার সত্যতা জেনে আপ্লুত হয়েছিলেন। পরে দিল্লিতে গিয়ে বাংলাদেশের সপক্ষে এবং স্বার্থে আন্তর্জাতিকভাবে তার অভিমত বিশ্ববাসীকে জানিয়েছিলেন। যা বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সমর্থন যোগাতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল।