ত্রিপুরার প্রবীণ সাংবাদিক সত্যব্রত চক্রবর্তী মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতের সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছিল
প্রিয়াংকা আচার্য্য : ত্রিপুরার বিশিষ্ট সাংবাদিক সত্যব্রত চক্রবর্তীর জন্ম তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার অ্যান্টি-পাকিস্তান অ্যাক্টিভিটির নামে তার বাবাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে সেই রাত্রেই দেশ ছেড়ে চলে যান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয়ভাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে জোরালো অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আগরতলায় তার বাড়িতে বসেই শোনালেন মুক্তিযুদ্ধের কথা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির একমুখিতা একটা লক্ষনীয় ঘটনা। আদর্শ-নীতি-মত নির্বিশেষে সবগুলো দলই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তখন ভারতে কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী) এই প্রধান দুই দলসহ অন্যান্য সকল দলের লক্ষ্য ছিল এক- স্বাধীন হোক বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আগরতলাসহ অন্যান্য জেলায় এর সমর্থনে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন তৈরি হয়েছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। জনসভায় আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য পরিবেশনসহ সাহিত্যমেলা পরিবেশন করা হতো। আমরা আগরতলা পোস্টঅফিস চৌমুহুনীর গোল চত্তরে আমরা চিত্র প্রদর্শনীসহ আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক সংগীত এবং বক্তৃতার আয়োজন করেছিলাম সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ড. আনিসুজ্জামানকে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে এসেছিলেন। তিনি তখন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক। আগরতলায় শরনার্থী হিসেবে এসেছিলেন।
অগ্নিকন্যা হিসেবে পরিচিত বেগম মতিয়া চৌধুরীও ছিলেন তখন আগরতলায়। তিনিও আমাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা রেখেছিলেন। তাকে নিয়ে আমি সরকারি-বেসরকারি বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছি। তিনি ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের কাছে পূর্ব বাংলার অবস্থা জানিয়ে সমাবেশে বক্তব্য রাখতেন। মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের উপর স্পষ্ট এবং মূল্যবান আলোকপাত করতেন। তার বক্তৃতা খুব জনপ্রিয় ছিলো আগরতলা শহরে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আগরতলায় বহু মিছিল হয়েছিল। সকল নাগরিক নারী-শিশু নির্বিশেষে সেই মিছিলে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বধীনতা কামনা করে, বাংলাদেশের জয়োধ্বনি করে। অনেক রক্ত-ক্ষতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। দুই দেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ফলেই ত্রিপুরা বিশেষ করে আগরতলার সকল মানুষের বিরাট সমর্থন বাংলাদেশের পক্ষে সবসময় থাকবে এমন প্রত্যাশাই আমাদের।