যদি নির্বাচিত হই, ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী
আসিফুজ্জামান পৃথিল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালে ১০ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিক্কি এশিয়ান রিভিউ
৭১ বছর বয়সী সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিক্কি এশিয়ান রিভিউকে বলেছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে। বাংলাদেশ গত এক দশক থেকে ৬ থেকে ৭ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে চলেছে। গত জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিলো ৭.৮৬ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৮.২৫ শতাংশ এবং তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচিত হই, তবে আমি নিশ্চিত করতে পারি আমাদের নেওয়া কর্মসুচির কারণে ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ১০ শতাংশ।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তাদের নেওয়া কর্মসুচীর কারণে বাংলাদেশ এশিয়ার দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হবে। উদাহরণস্বরুপ তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ঠ করতে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নেটওয়ার্ক তৈরী করছে। বর্তমানে দেশে ১১টি এরকম অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে আর ৭৯টির কাজ চলমান। প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী বছর বাংলাদেশ দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করবে। এই প্রকল্প বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিকে সামনে রেখে ঢাকার বৈদ্যুতিক উৎপাদন বৃদ্ধির অংশ। বাংলাদেশের মোট ১৭ হাজার ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫৮ শতাংশই গ্যাস নির্ভর। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি রাখতে চায় সরকার।
২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উচ্চাভিলাসি অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এসময়ে ২৭টির স্থানে ১২১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এসময়ে ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানষের মধ্যে ৪৭ শতাংশের স্থানে ৯৩ শতাংশ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। আগামী বছরের মধ্যভাগে শতভাগ মানুষ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে বলে আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী। রুপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান করছে ভারত ও রাশিয়া। এর সক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট যা ২০২৪ সালে উৎপাদন শুরু করবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। এটি দেশের দরিদ্রতম দক্ষিণাঞ্চলে তৈরী করা হতে পারে। তিনি জানান, বাংলাদেশ আগামী নির্বাচনের পর থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণ শুরু করবে। এই প্রকল্পে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। নিজেদের উচ্চাভিলাসী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর আওতায় কাজটি করতে চায় তারা। বাংলাদেশে চীনের বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে অবকাঠামো খাতে। এরমধ্যে ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলারের প্রকল্প যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে হচ্ছে। চীন সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ মালিকানা গ্রহণ করেছে।
প্রায় সকল ক্ষমতাধর দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে বাংলাদেশ নিজেদের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রস্তাব গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ যে ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে তা নির্বাচনী ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের দুর্দশার কথা স্বরণ করেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে। এসময় ১ কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান, যখন আমি রোহিঙ্গাদের কষ্ট লাঘবের সিদ্ধান্ত নেই আমার জনগন আমাকে সমর্থন দিয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সঙ্গে আমাদের খাবার ভাগ করবো। আমার জনগন তা রমেনে নিয়েছে। আমরা আমাদের কাজ করেছি। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি, তাদের খাদ্য দিয়েছি, স্স্থ্যসেবা দিয়েছি। নারী এবং শিশুদের যতœ নিয়েছি।’ সম্পাদনা : ইকবাল খান