আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
প্রাক্কলন ব্যয় ৬৭০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ালো ৪০৮৬.৬২ কোটি টাকায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের অতিরিক্ত ৪ কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় বাবদ ওরিয়ন পাচ্ছে ১,৭০৮ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : অতিরিক্ত কাজের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অনুমোদন না থাকলেও ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী) ফ্লাইওভার’ নির্মাণ কাজের অতিরিক্ত ব্যয় ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন’ (ডিএসসিসি)-কে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে ‘সালিশি (আরবিট্রেশন) ট্রাইব্যুনাল’। রায় অনুযায়ী, ফ্লাইওভারের অতিরিক্ত দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার ও অন্যান্য কাজের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’-কে মূল চুক্তির অতিরিক্ত ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যাংক রেটের অতিরিক্ত ২ শতাংশ হারে সুদ দেবে ডিএসসিসি। এদিকে সালিশি ট্রাইব্যুনালের রায়ে ডিএসসিসি-কে অতিরিক্ত ব্যয় পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হলেও সরকারি খাত থেকে অর্থ পরিশোধের আবেদন জানিয়েছে ওরিয়ন।
জানা যায়, পিপিপি’র মাধ্যমে ‘বিল্ড-ওন-অপারেট-ট্রান্সফার’ (বিওওটি) পদ্ধতিতে ফ্লাইওভারটি নির্মাণে তৎকালীন অবিভক্ত ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন’ ২০০৫ সালে বিদেশি ঠিকাদার ‘বেলহাসা একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’-এর সঙ্গে চুক্তি করে। এর মধ্যে ওরিয়নের শেয়ার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। ওই সময় ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ কিলোমিটার এবং ব্যয় ধরা হয় ৬৭০ কোটি টাকা। কিন্তু নকশার ত্রুটির কারণে পরববর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় ফ্লাইওভারের কাজ শুরু করা হয়। তখন ডিজাইন সংশোধন/সম্প্রসারণ, নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়া ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে এর সংশোধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যয় ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা যোগ করলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে প্রায় তিন বছর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালে বিদেশি অংশীদারকে বাদ দিয়ে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিজেই ফ্লাইওভার নির্মাণের দায়িত্ব নেয় এবং ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ওরিয়ন-কে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক থেকে ৫৫০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৬০০ কোটি টাকা ও অগ্রণী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা ও ‘ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (আইসিবি) থেকে ৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়। এর বাইরে বেসরকারি ‘সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক’ থেকে ৫০ কোটি টাকা নেয়া হয়।
পাশাপাশি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’-এর সঙ্গে চুক্তি করে ওরিয়ন। চুক্তি অনুযায়ী, ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য সিমপ্লেক্স-কে প্রায় ৭৮৮ কোটি টাকা দেয়ার কথা গ্রুপটির।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে, ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৮ কিলোমিটার। কিন্তু ওরিয়ন-এর হিসাব মতে, এর মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ডিএসসিসি বিষয়টি মেনে না নিলে ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য বৃ্িদ্ধর কারণে অতিরিক্ত ব্যয় দাবি করে ২০১২ সালে আরবিট্রেশনে মামলা করে ওরিয়ন। গত ৩০ অক্টোবর এ মামলার রায় দেয়া হয়েছে।
মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে ওরিয়নের দাবিকৃত অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধের বিষয়ে সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ‘পিপিপি আইন ২০১৫’ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, সালিশি ট্রাইব্যুনালের রায়ই চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে আপীলের সুযোগ নেই উল্লেখ করে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে ডিএসসিসি’র সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে অর্থ বিভাগ। এর বিপরীতে বৈঠকে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ‘আরবিট্রেশন অ্যাক্ট ২০০১’ অনুযায়ী আপিলের সুযোগ রয়েছে। সালিশি মামলার রায় ডিএসসিসি’র কাছে পৌঁছেছে গত ২৬ নভেম্বর। এটি এখন বিচার-বিশ্লেষণের পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য বাড়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছ থেকে এখনও কোন চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। সম্পাদনা : ইকবাল খান