দেং জিয়াওপিং থেকে শি জিং পিং ৪০ বছরে চীনের অর্থনৈতিক অভাবনীয় সাফল্য
আসিফুজ্জামান পৃথিল : ১৯৭০ এর দশকে চীনের ভিক্টর গাও যখন বড় হচ্ছিলেন, তখন চীনের গ্রামাঞ্চলে গাড়ি এতটাই বিরল ছিলো যে, তিনি তার খেলার সঙ্গীরা গাড়ি দেখলেই পেছনে পেছনে দৌঁড়াতেন। আর বর্তমানে চীন বিশে^র বৃহত্তম অটোমোবাইল উৎপাদক। দেশটিরে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে দ্বিগুণ গাড়ি উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে মাত্র ৪০ বছরে। ১৯৭৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর চীনের নেতা দেং জিয়াওপিং সারা বিশে^র জন্য চীনের বাজার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এদিন থেকে চীন প্রবেশ করে প্রতিযোগিতামূলক বিশ^ বাজারে। এরপরেই দেশটি পরিণত হয়েছে দারিদ্রপীড়িত দেশ থেকে অর্থনৈতিক সুপারপাওয়ারে। সিএনএন
চীনে এই পরিবর্তনের ঘটনা, ‘সংস্কার এবং উন্মুক্তকরণ’ নামে বহুল পরিচিত। ১৯৭৮ সালে জিয়াওপিং যখন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বকে এই সংস্কারের প্রস্তাব দেন চীনের জিডিপি ছিলো ১৫ হাজার কোটি ডলারের নিচে। ৪০ বছর পর আজ তা ১২ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। বিশে^ চীনের চাইতে বড় অর্থনীতি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে বর্তমানে দেশটি একটি অদ্ভূত সমীকরণের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনকে আরো উদার মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য চাপ দিচ্ছেন। এদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং চাচ্ছেন অর্থনীতি সহ সমাজের সকল স্তরে আগের মতোই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।
১৯৭৮ সালে চীনা অর্থনীতি চরম দারিদ্রপীড়িত ছিলো। এর পেছনে প্রধান কারণ ছিলো অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনা। লাখো-কোটি গ্রামীণ শ্রমিক ছিলেন বড় ধরণের অপুষ্টির শিকার। অর্থনীতি ছিলো দেউলিয়াত্বের মুখে। আজকের চীনের হাতে রয়েছে বিশ^ সম্পদের ১০ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মাথাপিছু সম্পদ ৪ গুণ হয়েছে। ১ শকাংশের কম মানুষ এখন দারিদ্রসীমার নিচে। এই উলম্ফনের সিংহভাগ কৃতিত্ব জেং জিয়াওপিং এর। তিনি এমন এক সময় ক্ষমতা নিয়েছিলেন, যখন মাও সেতুং এর মৃত্যুতে চীনে টালমাটাল অবস্থা চলছে। এর ফলেই দেং সিদ্ধান্ত নেন এক ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষানীরক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার। এক দলের শাষণে থাকা একটি দেশে অর্থনীতি থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আলগা করা এবং জনগনকে ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা প্রদান করার সিদ্ধান্ত সহজ ছিলো না। এসময় দেং বলেছিলেন, ‘যতক্ষণ বিড়াল ইঁদুর ধরবে, ততক্ষণ সে সাদা নাকি কালো তাতে যায় আসে না।’ ধীরে ধীরে দেশটি বদলেছে। কৃষকরা নিজেদের অতিরিক্ত ফসল বিক্রি করে মুনাফা করেছে। উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশটির অসংখ্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ তৈরী করেছেন।
১৯৯০ সালে আবারও খুলে দেওয়ার পর চীনের পুঁজিবাজার মুক্তবাজার পুঁজিবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীন পুঁজিবাদ এবং সমাজতন্ত্রের যে অসামান্য মিশ্রণ তৈরী করেছে, তা সম্ভব হয়েছে দেং এর দূরদর্শীতার ফলেই। তবে বর্তমান নেতা শি জিং পিং এর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জের কোন অভাব নেই। তার স্বপ্নের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ চীনকে বিশে^র অন্যতম শক্তিশলিী দেশ থেকে পরিণত করতে পারে বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালী দেশে। তবে চীনের অর্থনীতির গতি কমছে বলে কিছু উপাত্ত থেকে জানা যায়। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে কিছুটা হলেও চীরেনর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা অনস্বীকার্য। এবার দেখার বিষয়, দেং এর তৈরী করা লিগ্যাসি শি কতটা ধরে রাখতে পারেন। সম্পাদনা : ইকবাল খান