নির্বাচনী মাঠে বিনিয়োগকারী লেনদেনে ভাটা শেয়ারবাজারে
মাসুদ মিয়া : জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শেয়ারবাজারে লেনদেনের ভাটা পড়েছে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে শেয়ারবাজারে লেনদেন ততোই কমছে। গত সোমবার ডিএসইতে ৯ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ লেনদেন হয়েছে। মঙ্গলবারও লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে ছিল।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিন পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারে নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীর শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগ রয়েছে। অপরদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে দেশের পুঁজিবাজারে টানা শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত রেখেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। শেষ দুই মাসে (অক্টোবর ও নভেম্বর) বাজার থেকে বিদেশিরা যে পরিমাণ অর্থের শেয়ার ক্রয় করেন, বিক্রি করেছেন তার চেয়ে বেশি। শুধু এবারই নয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এর আগেও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এমন ঘটনা ঘটান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে টানা ১০ মাস বিদেশিরা বাজার থেকে যে পরিমাণ শেয়ার কিনেছিলেন, বিক্রি করেছিলেন এর চেয়ে বেশি।
অবশ্য কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে টানা ৪২ মাস বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির থেকে ক্রয় বেশি ছিল। নির্বাচন-কেন্দ্রিক বিনিয়োগে এমন ধীরগতি প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে- এমন সংস্কৃতি এখনও আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করেছে এটা ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন।
তারা বলছেন, নির্বাচন-কেন্দ্রিক অনিশ্চয়তার কারণে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কভাব বিরাজ করে। যার প্রভাব পড়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। দেশি বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এবিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে শেয়ারবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে নেই। সেই জন্য লেনদেন তলানিতে যাচ্ছে এটা বাজারের জন্য ভালো লক্ষন না। তবে তিনি আশা করেন, নির্বাচনের পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে।
এদিকে ডিএসইর সাবেক আরেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, আর কয়েকদিন পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত সে কারণে লেনদেন কম হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন সে কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন কম হচ্ছে। তবে নির্বাচনের পর শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে।
তিনি আরও বলেন, একজন ভালো বিনিয়োগকারীকে প্রথমে ভালো কোম্পানি বাছাই করতে হবে। ভালো কোম্পানি মানে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, যার আর্থিক বিবরণীর তথ্য-উপাত্তগুলো বিশ্বাস করা যায়।
বর্তমান প্রবৃদ্ধি ভালো ও ভবিষ্যতে ভালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে এমন কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করতে হবে। শাকিল রিজভী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের দেশের পুঁজিবাজার বড় হয় নাই। অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুঁজিবাজার বড় না হওয়ার কারণ হিসেবে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি না হওয়া, বাজারে মানুষের আস্থার অভাব ও ভালো বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণের অভাবের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ভেবেছিলাম নির্বাচনের আগে শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে এখন দেখি বাজার তলানিতে যাচ্ছে। এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো সংবাদ নয়। আশাকরি নির্বাচনের পর বাজার চাঙ্গা হবে। সম্পাদনা : এস এম এ কালাম ও প্রিয়াংকা আচার্য্য