গ্যাস সংকটে বন্ধ রাখাতে হয় ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র
শাহীন চৌধুরী : গ্যাস সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিদ্যুৎ সেক্টর। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) নিয়মিত প্রতিবেদন দেখা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে সারা বছর গড়ে ৬০০-৮০০ মেগাওয়াটের গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যেখানে পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রই গ্যাসের অভাবে চালানো যাচ্ছে না সেখানে আবার কেন গ্যাস ভিত্তিক নতুন কেন্দ্র তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। অবশ্য বিদ্যুৎ বিভাগ মনে করে, এলএনজি আসলে দেশে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। তখন গাস দিয়ে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো সম্ভব হবে।
আরইবি’র অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) একটি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএনটিআইসি) বিদ্যুৎ বিভাগে একটি চিঠিও দিয়েছে। পেট্রোবাংলা কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার বিষয়ে এর আগেও বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু একের পর এক গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করায় সেগুলো বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা সূত্রমতে, দেশে এলএনজির সরবরাহ আর গ্যাসের চাহিদা সমন্বয় করে বলা হচ্ছে, আগামীতে আরও একটি টার্মিনাল ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করলেও দেশে গ্যাসের ঘাটতি থাকবে। তাহলে কীভাবে নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ হবে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এখন একটি টার্মিনাল দিয়ে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করার কথা থাকলেও ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে। দেশে এখনও দৈনিক প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান না হলেও ময়মনসিংহে ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার আগ্রহ দেখিয়ে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে সিএনটিআইসি। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে সিএনটিআইসি দরপ্রস্তাব জমা দেওয়ার পর জরুরি ভাবে প্রক্রিয়াটি দ্রুত এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে করার অনুরোধ করেছে। কোম্পানি জানায়, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী সব ধরনের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের জানুযারি মাসে তারা ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ শেষ করে। একইভাবে তারা ময়মনসিংহের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করতে আগ্রহী।
কোম্পানিটি জানায়, তারা বিশ্বাস করে যে তারা আরপিসিএল-এর কাছে সবচেয়ে যোগ্য কারিগরি, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবেদন দিয়ে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছে। কোম্পানিটি গত ১০ ডিসেম্বর বিদ্যুৎ সচিব বরাবর পাঠানো এই চিঠিতে দরপত্রের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার পাশাপাশি দরপ্রস্তাব মূল্যায়নের বিষয়টি যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয় সে বিষয়ে জোর দেওয়ার অনুরোধ করেছে।
তবে আরপিজিসিএল’র এক কর্মকর্তা বলছেন, দরপত্র জমা দেওয়ার পরও এভাবে চিঠি দিয়ে নিজেদের পক্ষে কাজ চাওয়াকে অনৈতিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দরপত্র বাছাইয়ের সময় এমন কোনও কাজ করা উচিত নয় যাতে এই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যদিও সিএনটিসির এই প্রস্তাবকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সম্পাদনা : ইকবাল খান