গ্ল্যামার হারাচ্ছে ‘হ্যান্ডসাম’ শনি! দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে বলয়
আনিস রহমান : জন্মের সময় শনি অন্য ৮টি গ্রহের মতোই ছিল একেবারে সাদামাটা! অতি সাধারণ। তার ‘রূপ’ খুলেছিল প্রায় মাঝ বয়সে পৌঁছে! সেই গ্ল্যামারে চোখ ধাঁধিয়ে যেত সকলেরই।
কিন্তু পোড়া কপাল! সেই ‘রূপ’ আর তার কপালে সইবে না বেশি দিন। দ্রুত গ্ল্যামার হারাচ্ছে আমাদের সৌরম-লের ৬ষ্ঠ গ্রহÑশনি। তাকে ঘিরে থাকা অবাক করা একের পর এক বলয় (রিং) খুব দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। বলয়ে জমে থাকা বরফ অত্যন্ত দ্রুত হারে ঝরে পড়ছে শনির গায়ে, পিঠে। বলয় আর শনির মধ্যে থাকা মহাকাশে। হ্যাঁ, আমাদের সৌরম-লের সবচেয়ে ‘হ্যান্ডসাম’ গ্রহ শনি এভাবেই তার যাবতীয় সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে।
‘ক্যাসিনি’ মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এ কথা জানতে পেরেছে মেরিল্যান্ডে নাসার গর্ডার্ড স্পেস সেন্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস ও’দোনাঘুর নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। যে গবেষকদলে রয়েছেন দুই অনাবাসী ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী এস আর রামানুজন ও অশ্বিন মলহোত্রও। তাঁদের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘আইকারাস’-এ প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার ।
গবেষকরা ক্যাসিনি মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য খতিয়ে দেখে জানতে পেরেছেন, আর বড়জোর ১০ কোটি বছর। তার পর আর একটিও বলয় থাকবে না শনির। তা হয়ে পড়বে একেবারেই গ্ল্যামারহীন!
গবেষকদলের অন্যতম সদস্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস আর রামানুজন ই-মেলে ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে জানিয়েছেন, আমাদের সৌরম-ল ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এক দশক আগেই শনির ‘পাড়া’র গা ঘেঁষে দৌড়ানোর সময় নাসার দু-দুটি মহাকাশযান ‘ভয়েজার-১’ ও ‘ভয়েজার-২’-এর ‘নাকে’ও লেগেছিল শনির গ্ল্যামার হারানোর ‘গন্ধ’। কিন্তু তারা ভাবতেও পারেনি শনির কপাল পুড়বে এত তাড়াতাড়ি! ভয়েজার-১ এবং ভয়েজার-২ জানিয়েছিল, শনির বলয় ক্ষয়ে যাচ্ছে। তবে ৩০ কোটি বছর আগে তা উদ্বেগজনকভাবে ক্ষয়ে যাবে না। তত দিন অটুট থাকবে শনির গর্বের গ্ল্যামার।
রামানুজন বলেছেন, ‘ক্যাসিনি মহাকাশযান শনির বিষূব রেখার ওপরে যেভাবে তার একের পর এক বলয় থেকে জমা বরফ হু হু করে ছিটকে বেরিয়ে আসতে দেখেছে, তাকে এক রকম বরফের বৃষ্টিই (‘রিং রেন’) বলা যায়। আর সেই বৃষ্টি এতটাই ‘ঝমঝমিয়ে’ পড়ে চলেছে, যে দুটি ‘ভয়েজার’ মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য থেকে যে হিসেব কষা হয়েছিল, তা ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে, আর বড়জার ১০ কোটি বছর। তার পর আর কোনো বলয়ই থাকবে না শনির। তার আগেও পুরোপুরি গ্ল্যামারহীন হয়ে পড়তে পারে শনি।’
শনির বয়স আমাদের গ্রহের ধারেকাছেই। ৪০০ কোটি বছরের বেশি। তার বলয় যেভাবে দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে, তাতে বলা যায়, অল্প বয়সেই গ্ল্যামার হারিয়ে কিছুটা বুড়িয়ে যেতে পারে হ্যান্ডসাম শনি।