পর্যটন নির্ভরশীলতা : ঝুঁকির মুখে শ্রীলংকার অর্থনীতি
আবুল বাশার
শ্রীলংকার অর্থনীতি পর্যটনের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। তবে রোববারের বোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটক হারানোর শঙ্কার মুখে পড়েছে এশিয়ার দেশটি। এরই মধ্যে হাজারো পর্যটক শ্রীলংকায় তাদের ছুটি সংক্ষিপ্ত করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। অন্যদিকে অগ্রিম বুকিং হারে মারাত্মক অবনতি দেখা দিয়েছে। এ হামলায় যেমন ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে, তেমনি শ্রীলংকার নাজুক অর্থনীতিকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
গত রোববার শ্রীলংকায় চার্চ, বিলাসবহুল হোটেলসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় একের পর এক বোমা হামলা চালানো হয়। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী, ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে সংঘটিত এ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৫০ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় ৫০০ জন। আক্রান্ত হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে কলম্বোর সমুদ্র-তীরবর্তী শাংগ্রি-লা। এ হোটেলে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩৯ জন বিদেশী পর্যটক রয়েছেন, যারা যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিলেন।
ভারত মহাসাগরের এ দ্বীপরাষ্ট্রে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ পর্যটক আসে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, শ্রীলংকার অর্থনীতিতে অবদান রাখা সবচেয়ে বড় খাতগুলোর একটি পর্যটন, যেখানে কাজ করে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের তথ্য অনুসারে, শ্রীলংকার বিদেশী মুদ্রার তৃতীয় সর্ববৃহৎ উৎস পর্যটন খাত। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের এশিয়াবিষয়ক অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স গোমেজ বলছেন, শ্রীলংকা সরকারের হাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তামিল টাইগারদের পতনের মাধ্যমে প্রায় তিন দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। এরপর গত ১০ বছরে দেশটির অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্ব দ্রæত হারে বেড়েছে। গত দশকে শ্রীলংকার বড় সাফল্য এ পর্যটন খাত। এ সহিংসতা খাতটিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, অন্তত স্বল্পমেয়াদে।
অন্যদিকে আসন্ন মাসগুলোর জন্যও পর্যটকরা নিজেদের পরিকল্পনা বাতিল করছেন। একটি উড়োজাহাজ সংস্থা জানিয়েছে, পরবর্তী দুই মাসের হাজারো অগ্রিম টিকিট বুকিং বাতিল করা হয়েছে। পর্যটন খাতের সংগঠন হোটেলস অ্যাসোসিয়েশন অব শ্রীলংকার (টিএইচএএসএল) প্রেসিডেন্ট ও মাউন্ট লাভিনিয়া হোটেল গ্রুপের চেয়ারম্যান সানাথ উকওয়াট বলেন, এখন পর্যন্ত অগ্রিম বুকিংয়ের একটি বড় অংশ বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার হোটেলে অগ্রিম বুকিংয়ের প্রায় ২০ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। অনলাইন বুকিং সাইট ও করপোরেট গ্রাহকরা বেশির ভাগ বুকিং বাতিল করেছে বলে জানান তিনি। শ্রীলংকায় বিদেশী পর্যটকদের ব্যয় করা মার্কিন ডলার, চীনা ইউয়ান ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা দেশটির অর্থনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশী ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার অবিরত প্রবাহ দেশটির প্রয়োজন রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শ্রীলংকার সরকারের নেয়া বিদেশী ঋণ দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ এবং এটি বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলংকা অন্য দেশ থেকে বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নিয়েছে। ২০১৮ সালে মুডি’স ও ফিচ উভয়ই শ্রীলংকা সরকারের ঋণমান অবনমন করেছে এবং ঋণ পরিশোধে দেশটি সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ঋণ পরিশোধে শ্রীলংকার সক্ষমতা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারালে দেশটির মুদ্রা আরো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের হোমস বলছেন, এমনটা হলে তা অর্থনীতির আরো ক্ষতি করবে। (বণিক বার্তা থেকে)