মিষ্টি আলু চাষ : অল্প পুঁজি বেশি রুজি
ইয়াছির আরাফাত
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন কৃষক; অপরদিকে বাড়ছে এ আলু চাষের আগ্রহও। আগে কুমিল্লার প্রায় প্রতিটি উপজেলাতেই অন্যান্য সবজি-জাতীয় ফসলের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে মিষ্টি আলুও চাষাবাদ হতো। পুঁজি ও শ্রম- দুটোই সাশ্রয়ী হওয়ায় জেলার কৃষকরা নিজেদের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি আলু চাষ করতেন।
কিন্তু সময়ের সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কৃষি জমিতে ইরি-বোরো, আউশ, আমন ধানের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে দাম কমতে থাকায় মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহ হারাতে থাকেন কৃষক। তাই মাঝের কয়েক বছর এ অঞ্চলের ফসলি জমিতে ধান ছাড়া অন্য কোনো কিছুর চাষাবাদ হতো না বললেই চলে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গেলো কয়েক বছর ধরে কুমিল্লার কয়েকটি অঞ্চলের কৃষক আবারো মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে জেলার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার প্রায় প্রতিটি গ্রামের কৃষকই চলতি মৌসুমে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মিষ্টি আলু চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভালো। তাছাড়া বাজারে চাহিদা ও অধিক দাম থাকায় লাভবানও হচ্ছেন তারা।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের আসাদনগর গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আগে এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি আলু চাষ হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই বাজারে দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ১০-১৫ বছর ধরে এখানকার কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষ থেকে অনেকটাই দূরে সরে যান। তবে ইদানিং বাজারে চাহিদা ও দাম বাড়ায় কৃষকরা আবারো মিষ্টি আলু চাষে মনযোগী হচ্ছেন। অন্যদের মতো আমিও কয়েক শতক জমিতে এবার চাষ করেছি।’ মনোহরপুর গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক বলেন, ‘গত বছর আমি ১০ শতক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় এবছর ৩০ শতক জমিতে চাষ করেছি। গতবারের চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে। বাজার ঘুরে দেখেছি দামও ভালো। দু’একদিনের মধ্যেই আলু বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যাবো।’
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সঠিক পদ্ধতিতে মিষ্টি আলু চাষ করে এখানকার কৃষকরা স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভের মুখ দেখছেন। তাদের দেখাদেখি অন্যরাও এ আলু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সে ধারাবাহিকতায় কয়েক বছর ধরে ব্রাহ্মণপাড়ায় মিষ্টি আলুর চাষ বাড়ছে। সেই সাথে বেড়েছে কৃষকের আয়ও। এ প্রসঙ্গে কথা হয় ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর যাবত ব্রাহ্মণপাড়ার কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে প্রতি বছর চাষকৃত জমির পরিমাণ বাড়ছে। চলতি বছর ব্রাহ্মণপাড়ায় ১১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে। গতবার চাষ হয়েছিলো ৯০ হেক্টর জমিতে।’ ‘পুষ্টিকর এ ফসল চাষাবাদে খরচ অনেক কম লাগে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জমিতে তেমন সার প্রয়োগ করতে হয় না, কোনো রোগ বালাইও দেখা যায় না। মিষ্টি আলু চাষে শুধু নিয়ম মেনে সঠিক পরিচর্যা করলেই অল্প পুঁজি ও অল্প শ্রমে অধিক মুনাফা লাভ করা যায়।’