মধু সংগ্রহকারী ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে অ্যাপ
আবুল বাশার
আমাদের দেশে মধু উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষত সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে মধুর ব্যবসা জমে উঠেছে। সুন্দরবন থেকে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাজারে বিক্রি করেন। দেশের অন্যান্য কয়েকটি স্থানে বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ শুরু হয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে মধু। তবে দেশে বাণিজ্যিক উপায়ে মধু উৎপাদনের প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো অনেক এগিয়ে রয়েছে। এসব দেশে অনেক আগে থেকেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মধু উৎপাদন হয়ে আসছে। মধু সংগ্রহকারী বা মৌয়ালরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের পর তা উৎপাদনকারীদের কাছে বিক্রি করেন। পরবর্তী সময়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সংগ্রহ করা মধু পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণের পর বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে। পুরো একটি সাপ্লাই চেইনের ভেতর দিয়ে মধু মৌচাক থেকে ক্রেতাদের হাতে আসে।
মধুর সাপ্লাই চেইনে প্রাথমিক অবস্থায় সংগ্রহকারী ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন ও সমন্বয় সাধন করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ। ‘পলিনেশন নেটওয়ার্ক’ নামের এ অ্যাপ মধু সংগ্রহকারী ও উৎপাদনকারীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। মধু সংগ্রহকারীদের চাকরির নিশ্চয়তা দেবে এবং পণ্যটির বাজারজাত ও দাম নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লে স্টোরে বিনা মূল্যে বিশেষ এ অ্যাপটি পাওয়া যাচ্ছে।
ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় মধু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই মৌমাছি চাষ করে। তবে উৎসব আয়োজনে বাড়তি চাহিদা কিংবা দুর্যোগের সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী মৌমাছি ও মধু পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলো মৌয়ালদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করে। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বছরজুড়েই ব্যক্তি পর্যায়ের মৌয়ালদের কাছ থেকে মধু কিনে থাকে। এক্ষেত্রে মৌয়াল ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। হঠাৎ করে কোনো কারণে অতিরিক্ত মধুর প্রয়োজন হলে সমস্যায় পড়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। মূলত এ সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করা হয়েছে মোবাইল অ্যাপ পলিনেশন নেটওয়ার্ক।
অ্যাপটির প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ডন বোউয়ি বলেন, বছরজুড়ে মৌয়ালদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করা যেকোনো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন একটি কাজ। এ কাজটিতে সহজ করে আনার জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে বিশেষ এ অ্যাপটি। এটি মধুর সাপ্লাই চেইনকে নিরবচ্ছিন্ন করবে। বছরজুড়ে পর্যাপ্ত মধুপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেবে। তিনি জানান, শুরুতে মধু সংগ্রহকারীদের অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। এরপর তিনি একটি ম্যাপ দেখতে পাবেন। এ ম্যাপে দেশজুড়ে কোন কোন প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণে মধু কিনতে আগ্রহী সে সম্পর্কে তথ্য দেয়া থাকবে। সে তথ্য দেখে তিনি নিকটস্থ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সরাসরি মধু বিক্রি করতে পারবেন। এমনকি মধুর মান ও সম্ভাব্য দামের বিষয়েও অ্যাপটিতে তথ্য যুক্ত থাকবে।
এর ফলে উভয় পক্ষ সহজেই পণ্যটির দাম নির্ধারণের জন্য দরকষাকষি করতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠান স্থায়ী ভিত্তিতে মধু সংগ্রহকারী নিয়োগ দিতে চাইলে সে তথ্য অ্যাপটিতে যুক্ত করতে পারবে। ফলে মধু সংগ্রহকারীরা চাইলে অ্যাপটি থেকে স্থায়ী চাকরির তথ্যও পেতে পারেন। একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কেন্দ্র থেকে মধু সংগ্রহকারী ও উৎপাদনকারীদের মধ্যকার এ নেটওয়ার্কিং সিস্টেম তদারক করা হবে।
ব্র্যান্ডন বোউয়ি বলেন, পলিনেশন নেটওয়ার্ক শুধু মধু সংগ্রহকারী ও উৎপাদনকারীর মধ্যে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করবে না, এটি পারস্পরিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কার্যকর একটি প্লাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে। একই সঙ্গে এটি পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি ক্রেতাদের টেবিলে ভালো মানের মধু পৌঁছে দিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।