ক্যারিবিয়ানকে বদলে দেবে অফশোর ম্যারিকালচার
আবুল বাশার
মাছের অফুরন্ত সরবরাহ শুধু সাগরেই পাওয়া সম্ভব। যদিও এরই মধ্যে মানবজাতির মৎস্য ক্ষুধার জের ধরে সাগরের অফুরন্ত মৎস্যভান্ডারেও এখন টান পড়েছে। অন্যদিকে পৃথিবীর মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য প্রাণিজ আমিষের চাহিদা ক্রমে বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি সামুদ্রিক সম্পদের প্রাচুর্য রক্ষায় অ্যাকুয়াকালচার বা মৎস্য চাষ বাড়ানোরও কোনো বিকল্প নেই।
বিষয়টিকে মাথায় রেখে সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ইউসি সান্তা বারবারাস ব্রেন স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ও মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের (এমএসআই) গবেষকরা সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অ্যাকুয়াকালচারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য এক সমীক্ষা চালান। এক্ষেত্রে মূলত অফশোর ম্যারিকালচার বা তীরভূমি থেকে সাগরে মৎস্য চাষ কার্যক্রম পরিচালনার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখেছেন তারা। বর্তমানে অল্প জায়গাজুড়ে পরিচালিত এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী স্থলভূমিভিত্তিক ও উপকূলীয় মৎস্য চাষ কার্যক্রমের সম্ভাবনাময় এক বিকল্প হয়ে দেখা দিয়েছে অফশোর ম্যারিকালচার। রক্ষণশীল হিসাবের ভিত্তিতে গবেষকরা দেখতে পান, ওই অঞ্চলে প্রতি বছর চাষের মাধ্যমে ৩ কোটি ৪০ লাখ টন সামুদ্রিক মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। সম্ভাব্য এ উৎপাদনের পরিমাণ ওই অঞ্চল থেকে মোট আহরিত সামুদ্রিক মাছের দ্বিগুণ। এ সমীক্ষায় উঠে আসা ফলাফল নিবন্ধ আকারে ‘নেচার সাসটেইনেবিলিটি’ জার্নালে প্রকাশ হয়েছে।
এ বিষয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদনের শীর্ষ লেখক লেনন থমাস বলেন, ‘ক্যারিবিয়ানে অফশোর ম্যারিকালচারের সম্ভাবনা অনেক বেশি। এবং সাগরের ছোট ছোট এলাকায় ম্যারিকালচারের মাধ্যমেই এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে।’ গবেষকদের উপস্থাপিত মডেল বলছে, ওই অঞ্চলে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনগুলোর জন্য যে পরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দেয়া আছে, মহাসাগরে তার মাত্র দেড় শতাংশ পরিমাণ জায়গা ব্যবহার করেই বছরে চার কোটি টন মৎস্য ও সামুদ্রিক খাবার উৎপাদন করা সম্ভব। এ পরিমাণ বর্তমান বৈশ্বিক অচাষকৃত মৎস্য উৎপাদনের অর্ধেক। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন এলে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বর্তমানে যে পরিমাণ সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয়, ম্যারিকালচারের মাধ্যমে ১৭৯ বর্গকিলোমিটারের মধ্যেই একই পরিমাণ মৎস্য উৎপাদন সম্ভব। এ আয়তন ক্যারিবিয়ানের মোট সমুদ্রসীমার মাত্র দশমিক শূন্য শূন্য ৬ শতাংশের সমান।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের প্রতিটি দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই এ সমীক্ষা চালান লেনন থমাস ও তার সহযোগীরা। এর মধ্য দিয়ে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যপটকে বর্ণনা করেন তারা। এর মধ্যে প্রথমটিতে উপযোগী সব এলাকায় ম্যারিকালচার করা হলে কী ধরনের পরিস্থিতি দাঁড়ায়, সেটিকে বর্ণনা করা হয়। দ্বিতীয়টিতে ১০ বছর মেয়াদে ১০ শতাংশ ডিসকাউন্টে শুধু যেসব এলাকায় ম্যারিকালচার লাভজনক, সেগুলোকে বিবেচনায় নেয়া হয়। তৃতীয়টিতে এ অঞ্চলের একেকটি দেশের বিনিয়োগ ঝুঁকির ভিত্তিতে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্টে শুধু যেসব এলাকায় ম্যারিকালচার লাভজনক, সেগুলোর ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তা বিবেচনা করা হয়। প্রতিটি প্রেক্ষাপটেই ক্যারিবিয়ানে ম্যারিকালচার অত্যন্ত লাভজনক বলে উঠে আসে। (জাগো নিউজ থেকে)