ব্রæড চাষে বাণিজ্যিকভাবে সফল যশোরের ব্যবসায়ীরা
আবুল বাশার
দেশীয় রুই প্রজাতির মাছের মানসম্মত ব্রæড প্রতিপালনে সফলতার দেখা পেয়েছেন যশোরের হ্যাচারি মালিকরা। কয়েক বছর আগেও ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্রæড মাছ সংগ্রহ করে প্রজননের মাধ্যমে রেণু ও পোনা উৎপাদন করলেও এখন নিজেদের পুকুর ও জলাশয়ে মা মাছ লালন-পালন করে সে চাহিদা পূরণ করতে পারছে। ফলে একদিকে মানসম্মত রেণু ও পোনা উৎপাদন করে যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বড় মাছ বাজারজাত করে তারা বাড়তি আয় করছেন।
সাধারণত রুই-জাতীয় মাছের হ্যাচারি মালিকরা প্রতিবছর ব্রæড পুকুরের পূর্ণ ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এতে ব্রæড মাছ যথাযথভাবে প্রস্তুত হয় এবং মাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম উৎপাদন করা যায়। যেসব হ্যাচারির মালিক দ্রæত ব্রæড মাছ ব্যবস্থাপনা করেন, সেসব হ্যাচারিতে আগাম রেণু পোনা উৎপাদন ও অধিক মূল্য প্রাপ্তি হয়।
আশির দশকে যশোরের চাঁচড়া এলাকায় প্রথম মাছের রেণু পোনা উৎপাদন শুরু হয়। সেই থেকে এ অঞ্চলে রেণু উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। সারা দেশের উৎপাদিত রেণু পোনার অর্ধেকই যশোরের। এখানকার গড়ে ওঠা লাভজনক মৎস্য প্রজনন খামারগুলো কয়েক দশকের মধ্যে বিকশিত হলেও পরবর্তী সময়ে তারা সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। বিশেষ করে ব্রæড ফিশের জোগানস্বল্পতা এর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দেখা দেয়। পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুমে ব্রæড মাছের অভাবে হ্যাচারি মালিকদের হালদা-মেঘনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছুটতে হতো। অনেক সময় মানসম্মত ব্রæড না পাওয়ায় রেণু ও উৎপাদনে চরম সংকটে পড়তেন হ্যাচারি মালিকরা। এ সংকট উত্তরণে অবশেষে যশোরের চাঁচড়ার হ্যাচারি মালিকরা ব্রæড মাছ চাষে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা প্রাকৃতিক উৎস থেকে মানসম্মত রুই-জাতীয় মাছের পোনা সংগ্রহ করে নিজেদের পুকুর ও জলাশয়ে লালন-পালন করতে থাকেন। এভাবেই এখন মাছের প্রজননে বড় ভূমিকা রাখছেন যশোরের হ্যাচারি মালিকরা।
যশোরে ৩২ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। এ জেলায় ১৩ হাজার ৬২৬ হেক্টর জলাশয় রয়েছে। বাঁওড় রয়েছে ১৩ হাজার ৩৯১ হেক্টর। সদর উপজেলায় সাদা মাছ ও পাঙ্গাশ রেণু উৎপাদন করছে ৩৪টি হ্যাচারি। আর পুরো জেলাজুড়ে এমন হ্যাচারির সংখ্যা ৫২। এসব খামারে রেণু উৎপাদন হয় ৫৪ হাজার ২০০ কেজি, যা থেকে পোনা উৎপাদন হয় প্রায় ৪৮ কোটি ৩৭ লাখ। এসব রেণু ও পোনা উৎপাদনে জেলার পুকুর-জলাশয়ে লালন-পালন করা ব্রæড মাছ বিশেষ ভূমিকা রাখছে। ব্রæড মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ বিশেষ ভূমিকা রাখছে। গত দুবছর ধরে যশোরের হ্যাচারিগুলোয় নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করছে মাছ চাষিদের।
বর্তমানে যশোরের হ্যাচারিগুলোয় প্রায় ৫০ হাজার ব্রæড মাছ সংরক্ষিত রয়েছে। প্রজননের পর আগামী বছরের জন্য আরও প্রায় ৫০ হাজার পিশ প্রস্তুত রাখা হয়। ব্রæড মাছ চাষের কারণে রেণু ও পোনা উৎপাদন করে প্রচুর টাকা আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আশা করা যায়, আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে রুই-জাতীয় মাছের ব্রæড উৎপাদনে শতভাগ সফলতা অর্জন করবে যশোর। রুই-জাতীয় মাছের হ্যাচারির আদর্শ মালিকরা প্রতিবছর ব্রæড পুকুরের পূর্ণ ব্যবস্থাপনা করে থাকে।