আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো গেলে প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে
ইয়াছির আরাফাত
টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। এ ধরনের আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো গেলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বর্তমান হারের চেয়ে আরও এক থেকে দুই শতাংশ বাড়াতে পারে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটালেও দক্ষিণ এশিয়ায় তেমনটি হয়নি। এক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরই) ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে গতকাল রাজধানীর বনানীতে পিআরআই কার্যালয়ে আয়োজিত ‘লিভারেজিং গ্রোথ অপরচ্যুনিটিজ ইন দ্য নেইবারহুড’ শীর্ষক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ. রহমান বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বেসরকারি খাতনির্ভর প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। এ জন্য সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করছে। আর বেসরকারি খাত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা।
আঞ্চলিক বাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের যে কোনো এলাকার চাইতে পিছিয়ে আছে বলে ড. সঞ্জয় কাঠুরিয়ার গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মোট বিদেশি বাণিজ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশ সম্পন্ন হয় প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (আসিয়ান) দেশগুলো বহির্বাণিজ্যের ২৬ শতাংশ করে থাকে নিজেদের মধ্যে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্যের হার ৬০ শতাংশ। আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (সাফটা) কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ছয় হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্য করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিপরীতে এ অঞ্চলে বাণিজ্য হচ্ছে মাত্র দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলারের। ২০১৫ সালের এক হিসাব মতে, এ অঞ্চলে প্রতি বছর চার হাজার ৪০০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্য সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে। হতাশার বিষয় হলো এ অঞ্চলে বিপুল সম্ভাবনার বিপরীতে প্রকৃত বাণিজ্যের ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। ২০০১ সালে এ অঞ্চলে মাত্র ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্য সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছে।
এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য আড়াই গুণে উন্নীত হতে পারে বলে প্রতিবেদনটিতে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে এক হাজার ৮৯০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্য করতে পারে। এ সম্ভাবনার বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ৭৬০ কোটি ডলার। এ হিসাবে বাংলাদেশের এক হাজার ১৩০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্য নষ্ট হচ্ছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য ১৩ শতাংশ বাড়বে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য অন্তত ৫৪ কোটি ডলার বাড়তে পারে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও বাংলাদেশ আরও ৪২ কোটি ডলারের বাণিজ্য করতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়িয়ে বাংলাদেশের ভোক্তা, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই লাভবান হতে পারেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ভোক্তারা কম দামে ভালো পণ্য ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে উপকরণ পেতে পারে। তাছাড়া ভারতের অঞ্চলটিতে চূড়ান্ত পণ্য (ফিনিসড প্রডাক্ট) রপ্তানির সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন প্রযুক্তি, চিকিৎসা, জ্ঞান ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করতে পারবে।
ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, বাংলাদেশ তিনটি শর্ত পূরণ করেই এলডিসি থেকে উত্তরণ করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, মানব সম্পদ উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নেও অগ্রগতি হয়েছে। দারিদ্র্যও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে আঞ্চলিক বাণিজ্য সেইভাবে বাড়েনি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও তা বিস্তৃত হয়নি। নীতিমালাসহ বিভিন্ন বাধা রয়েছে। এসব বাধা দূর করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো গেলে টেকসই প্রবৃদ্ধি সম্ভব।
আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারে সার্ক ও সাফটা বলা চলে ব্যর্থ হয়েছে। আমলাতান্ত্রিকতাসহ বিভিন্ন নন-ট্যারিফ বাধা রয়েছে। বাণিজ্য নীতি একটি বড় ইস্যু। মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির পরিবর্তন দরকার। রোগীদের চিকিৎসা সহজ করতে ঢাকা-চেন্নাই সরাসরি ফ্লাইট চালু করা দরকার বলে মত দেন তিনি। (শেয়ারবিজ থেকে)