পরামর্শের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পান চাষিরা
আবুল বাশার
ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বাণিজ্যিকভাবে নেত্রকোণায় যে এখনও পান চাষ হয় সেটা হয়তো নেত্রকোণার অনেকেই জানেন না। এ বিষয়ে কোনো খবর নেই খোদ স্থানীয় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছেও। এদিকে, জেলার স্বল্প সংখ্যক চাষি বাণিজ্যিকভাবে পান চাষ করলেও সঠিক নির্দেশনা আর প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চাষিরা জানায়, পান চাষে সঠিক পরামর্শের অভাবে পান গাছের গোড়া ও পাতায় পচন, পাতায় দাগ পড়ে। এর কারণ না জানায় দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। তবে সঠিক পরামর্শ পেলে ক্ষতি এড়িয়ে অন্য ফসলের চেয়ে পান চাষে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের পান চাষি বিজয় বলেন, একসময় জেলার পৌর শহরের নাগড়া বাড়ইপাড়া এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে পান চাষ হতো। সেখানে আজ পান চাষের চিহ্নটুকু নেই। অথচ কঠিন সংগ্রাম করে বাপ-দাদার পেশা আজও আমরা ধরে রেখেছি। প্রতিবছরের মতো এ বছরও লাভের আশায় পান চাষ করেছি। বরজের পান পরিচর্যায় আন্দাজের ওপর বিভিন্ন মেডিসিন দেই। যতদ‚র সম্ভব হয় বুদ্ধি খাটিয়ে আর দোকানির পরামর্শে চাষাবাদ চালিয়ে যাচ্ছি।
চলতি বছরে এক কাঠা জমিতে পান চাষ করেছি। এতে শেষ পর্যন্ত কম করে হলেও খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন না হলে ছয়মাস পর থেকে পান তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবো। বরজ দেড় দুই বছর রাখতে পারলে দুই আড়াই লাখ টাকা উঠে আসবে। বিজয়ের প্রতিবেশি কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পান চাষ করছি। চলতি বছরে দুই কাঠা জমিতে পান চাষ করেছি। খরচ হবে প্রায় লাখ টাকা। সুদিনের নাগাল পাওয়া যেত যদি পান চাষের দিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ নজর ফেরাতো। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোনো খোঁজ নেয়নি। কৃষি অফিস থেকে কখনো কেউ না আসার কারণে আমরা ভাবুাম পান চাষ কৃষির আওতায় পড়ে না। শুধু স্বরমুশিয়া এই ইউনিয়ন নয় পানের চাষ হয় ষাটকাহন, শ্রীপুর, রামেশ্বপুরসহ চারটি গ্রামে। এই গ্রামগুলোর ৩৫-৪০টি পরিবার এখনো বাণিজ্যিকভাবে প্রতিবছর পান চাষ করে। ষাটকাহন গ্রামের জীবন বিশ্বাস, শ্রীপুর গ্রামের গঙ্গাচরণ ধর ও রামেশ্বপুর গ্রামের ধনেশ কর প্রত্যেকেই নিজ নিজ গ্রামে সুপরিচিত পান চাষি। তারা বাংলানিউজকে জানায়, ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ করে একবার এক কাঠা জমিতেও যদি পান চাষ করা যায় তবে কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন না হয়ে অন্তত সেই বরজ থেকে দুই আড়াই বছর পান তুলে বিক্রি করা সম্ভব। এ বিষয়ে জেলার কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি দুর্গাপুর ও আটপাড়ায় কেউ কেউ পান চাষ করেন কিন্তু তা বাণিজ্যিকভাবে নয়। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পান চাষিরা কি ধরনের পরামর্শ বা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো কর্মস‚চি নেই তারপরও কোনো চাষি পরামর্শ নিতে আসলে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।
আর পানপাতায় ছিটা দাগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে কুপ্রাভিট জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে। একই সঙ্গে ছিটা দাগ পড়া পান পাতা চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। পানপাতা পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে বরোজ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শও দেন এই কৃষিবিদ। (বাংলানিউজ থেকে)